চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার জের ধরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ক্যাম্পাসের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা অন্তত ২৬টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ও যানবাহনচালকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে প্রশাসনের লোকজন বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তবে রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ছাত্ররা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ভাঙচুরের প্রতিবাদে কাপ্তাই সড়কে আজ বুধবার বাস ও অটোরিকশাসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন কাপ্তাই বাস মালিক সমিতির নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তৌহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ১৪তম ব্যাচের আরিফুল ইসলাম কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ক্যাম্পাসে আসার সময় রাউজানের দমদমা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। অটোরিকশাচালক ও আরো দুজন মিলে তাঁর গলায় ছুরি ধরে দুটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়। এ সময় ছুরির আঘাতে গলায় জখম হন তিনি।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বিকেলে ছাত্ররা বিক্ষোভে নামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে ছাত্ররা। একপর্যায়ে তারা ১৬টি অটোরিকশা আটক করে ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে রেখে দেয়। তারা রাস্তায় গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে অবস্থান নেয়। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই প্রান্তেই শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পাহাড়তলী এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা, গাড়িচালক ও মালিকরা মিলে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ধাওয়া করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে এবং আটকে রাখা অটোরিকশা ভাঙচুর করে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্ররা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে সড়কে এসে তিনটি বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে সড়ক থেকে ব্যারিকেড তুলে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কাপ্তাই বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন দাবি করেন, ছাত্ররা তাঁর একটি বাসসহ দুটি বাস ভাঙচুর করেছে। আরেকটি বাসে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া তারা অটোরিকশা এবং আরো বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আজ বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাপ্তাই সড়কে বাস, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি। অন্যান্য যানবাহনের মালিকরাও আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ’
রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘একজন ছাত্র ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার নামে চুয়েটের ছাত্ররা অবরোধ করে ১৫টি অটোরিকশা, একটি বাস, একটি ট্রাক, একটি পিকআপ ভাঙচুর করেছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘যে ছাত্র ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে সে এখন ক্যাম্পাসেই নেই। আন্দোলনরত ছাত্ররা তাকে আমাদের কাছে হাজির করতে পারেনি। হঠাৎ করে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা ছাত্রদের বলেছি, ৬ জানুয়ারি রাউজানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আসছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে বৈঠক হবে এবং বিরোধের মীমাংসা হবে। ’
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হোসেন রেজা বলেন, ‘পাঁচজন শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ রোধে রাউজানে প্রত্যেক আটোরিকশাচালকের জন্য ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করা হবে। ইউনিফর্মের পেছনে তাঁদের নাম থাকতে হবে। তাঁদের নাম-পরিচয় জমা নেওয়া হবে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের মোবাইল ফোনসেট ছিনতাই হওয়ার জের ধরে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসি গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন। ’