ছাতা মাথায় ক্লাসরুমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা!

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি |

বরগুনার তালতলী উপজেলার তালুকদারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের ভেতর ছাতা মাথায় দিয়ে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। টিনের চালা দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে ধীরে ধীরে শ্রেণিকক্ষগুলো জমে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই বিদ্যালয়ের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমিপাকা টিনসেট ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। ওই ভবনের একটি কক্ষ শিক্ষকদের অফিস কাম লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বাকি ৩টি কক্ষে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে জরাজীর্ণ পুরাতন ওই সেমিপাকা টিনসেড ভবনের ৪টি রুমই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্য কোন শ্রেণি কক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই ওই জরাজীর্ণ ভবনের কক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন বলে শিক্ষকরা জানান । 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিচ্ছেন। এ সময় ওই পুরাতন আধাপাকা জরাজীর্ণ টিনসেড ভবনের ষষ্ঠ শ্রেণির কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাথায় ছাতা দিয়ে বসে ক্লাস করছেন। পুরাতন টিনের চালা দিয়ে অনবরত বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে পড়ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রেণিকক্ষগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরে যায়। একই অবস্থা অন্যান্য ক্লাসরুমগুলোতেও।

ষষ্ঠ শ্রেণির লামিয়া, সেফা, মহারজি ও শারিকাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের টিনের চাল ফুটো থাকার কারণে শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি পড়ে। তাই আমাদের ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়। ছাতা মাথায় দেয়ার পড়েও পানি পড়ে আমাদের বই খাতা ও পোশাক ভিজে যায়। এরপরেও আমরা বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করছি।

সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়টিতে ঝড় বৃষ্টির ও জরাজীর্ণ ওই পুরাতন শ্রেণিকক্ষে আমাদের ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাসে অংশ নিতে হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় কর্তৃপক্ষ পুরাতন ভবনটির মেরামত বা সংস্কার করতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর ঠিকাদারও কাজ ফেলে রেখেছেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবুল বাশার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের চালা দিয়ে পানি পড়ায় আমরা বৃষ্টিতে কক্ষের মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে বসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস দিচ্ছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের পুরাতন আধাপাকা টিনসেট ভবনটি খুবই জরাজীর্ণ। গত তিন চার বছর থেকেই ভবনটির বেহাল অবস্থায় আছে। একটু বৃষ্টি হলেই চাল থেকে পানি পড়ে ক্লাসের ভেতর জমা হয়ে যায়। তখন শিক্ষক ও  শিক্ষার্থীদের ছাতা মাথায় দিয়ে বসে ক্লাস করতে হয়। বই খাতাসহ নিজেরা যেন ভিজে না যায় সেজন্য শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে আসতে বলা হয়। 

তিনি আরও বলেন, পুরাতন সেমিপাকা টিনসেড ভবনটির সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও এখনও কোন সুফল পাইনি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ক্লাস করছেন। 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুল হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করি। ওই বিদ্যালয়ের যে আধাপাকা টিনসেট ভবনে বসে পাঠদান করানো হচ্ছে সেটি অনেক পুরানো ও জরাজীর্ণ। ওই বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। যতদ্রুত সম্ভব নির্মাণ কাজ শেষ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর জরাজীর্ণ ও আধা সেমিপাকা টিনসেট ভবনের কক্ষগুলো দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032598972320557