কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নগুয়া এলাকায় হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষকের বেধড়ক মারধরে হাফেজ শায়রুল (১৫) নামে এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে নগুয়া এলাকার হুফফাজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত শায়রুল হোসেনপুরের শাহেদল গ্রামের মুরশিদুল হক জনির ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক ফয়জুল আমিন (২২) নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার পাইমাসকা গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি অত্র মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী সানি বলে, আমরা কয়েকজন বন্ধু এক সঙ্গে বসে কথা বলছিলাম। হুজুর আমাদের কথা শুনে বলেন, আরেকবার কথা বললে গেইট ভেঙে ফেলে দেব। হুজুরের এই কথা শুনে শায়রুল বলে, দেহুমনে। এটা শুনে হুজুর রেগে গিয়ে শায়রুলের কানে চড় মারে। শায়রুল মার খেয়ে উঠে দাঁড়ালে সেখান থেকে মারতে মারতে রুমে নিয়ে যায়, বুকে ঘুষি দেয়, লাথি মারে। আমরা ঠেকাইতে গেলে আমাদেরকেও মারে। পরে আহত শায়রুহকে হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয়। ওকে আহত অবস্থায় রুমে রেখে গেট আটকে রেখেছিল। এরপর আমরা গিয়ে গেট খুলে শায়রুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন ওর মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এখন শায়রুলের অবস্থা খুবই খারাপ তাকে ময়মনসিংহ নিতে হয়েছে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন ওর জন্য। আমরা এর বিচার চাই।
আরেক সহপাঠী ইমন জানান, একটু কথা বলার জন্য মারতে মারতে হুজুর শায়রুলের অবস্থা খারাপ করে দিছে। তখন সে অজ্ঞান হয়েছে তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে রাখে নাই সবাই দোয়া করবেন।
হুফফাজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মোস্তাকিম বলেন, আমি মাদরাসায় ছিলাম না। বাইরে গিয়ে ফোন পাই নূরানী হুজুরের। উনার কাছ থেকে খবর পেয়ে মাদরাসায় ছুটে আসি। মাদরাসায় আসার পর জানতে পারি হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করার জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি ছিলাম না তাই সঠিক তা বলতে পারছি না। তবে এদের কাছ থেকে যা শুনছি তা আপনাকে বলেছি। একজন হাফেজ ছাত্রকে শিক্ষক এভাবেই মারতে পারে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে মুহতামিম বলেন, এটা ঠিক করে নাই। এর জন্য আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে।
আহত ছাত্র হাফেজ শায়রুলের চাচা সম্রাট বলেন, আমরা রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে ছুটে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। সদর হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রেফার্ড করে ডাক্তার। শায়রুলকে এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আমরা মাদরাসা শিক্ষকের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদরাসায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে থানায় আসি। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে থানায় একটি শিশু নির্যাতন আইনে অভিযোগ দায়ের করেছেন আহত শিক্ষার্থী শায়রুলের বাবা। অভিযুক্ত শিক্ষককে আদালতের কাছে সৌর্পদ করা হবে।