ছাত্রদলের কাউন্সিল শঙ্কা বাড়ছে, অনলাইনে ভোটের চিন্তা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। সিন্ডিকেটের তৎপরতায় যে কোনো সময়ে ভেস্তে যেতে পারে ২৭ বছর পর কাউন্সিলের এ আয়োজন। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেও কাউন্সিল করতে বদ্ধপরিকর হাইকমান্ড। তারা চাইছেন, ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে। তাই ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় বিকল্প পরিকল্পনাও করছেন তারা। ভোট আয়োজনে ব্যর্থ হলে অনলাইন পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। এর জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরের অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ও 'হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার' সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন কামরুল হাসান।

সূত্রমতে, এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারাদেশের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৮০ জন ভোটারের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করা হয়েছে। ভোট দেয়ার জন্য একটি অ্যাপসও তৈরি করা হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করবেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। তিনিই ভোট সংগ্রহ করে ফল ঘোষণা করবেন।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোট হবে।

কাউন্সিল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা জানান, তৃণমূলের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের পদ্ধতিকে বিএনপির অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। তারা মনে করছেন, এ প্রক্রিয়া সফল হলে পরে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলসহ অন্যান্য সংগঠনের কাউন্সিলও একই পদ্ধতিতে হবে। এর ফলে ভোটের রাজনীতিতে তাদের নেতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে সুষ্ঠু কাউন্সিলের পথে তারা নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেন। নতুন করে বিদ্রোহও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা দলের হাইকমান্ডের। 

এর আগে গত ৩ জুন ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়ার পর সংগঠনের বিক্ষুব্ধ একাংশ 'ধারাবাহিক কমিটির' দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ সময়ও বিক্ষুব্ধদের মাধ্যমে নানা অঘটন সৃষ্টির চেষ্টা করেন সিন্ডিকেট-নির্ভর নেতারা। এ সময় বিলুপ্ত কমিটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের প্রচেষ্টায় সিন্ডিকেট নেতাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ওই তিন নেতা বিক্ষুব্ধ নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে সমাধানের পথ তৈরি করেন।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ার বিষয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা জানান, তাদের আন্দোলনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারীর সংখ্যাই বেশি ছিল। তিনি তখন কারাগারে থাকায় ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে সার্চ কমিটির নেতারা আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। তবে কারাগার থেকে বেরিয়ে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে বিক্ষুব্ধদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনেন। এতে সিন্ডিকেট নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাদের নানামুখী প্রচেষ্টায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি ঝুলে যায়। ফলে বিলুপ্ত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, যা যে কোনো সময়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, তারা এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছেন। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তারা সেটার বাস্তবায়ন চান। 

অপর একজন নেতা বলেন, গত ৬ আগস্ট গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ ও বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠক হয় তারেক রহমানের। তিনি ধৈর্য ধরে বহিষ্কৃত নেতাদের কথা শোনেন। সিদ্ধান্ত হয়, তাদের বহিষ্কৃরাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এ ছাড়া তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে এবং ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা, বাছাই ও আপিল কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওই বৈঠকে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিলুপ্ত কমিটির নেতারা ছিলেন। তারেক রহমানের ওই আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেও ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

এদিকে, ছাত্রদলের কমিটি নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিত আমানউল্লাহ আমান, ইলিয়াস আলী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নোয়াখালী আঞ্চলিক বলয়সহ একাধিক সিন্ডিকেট তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত সংগঠনের সিন্ডিকেটবহির্ভূত প্রার্থী ও ভোটাররা। এসব বলয়মুক্ত হয়ে ভোটাররা কতটুকু স্বাধীন ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান তারা। এরই মধ্যে বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছেও উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনিও সিন্ডিকেট নেতাদের সতর্ক করেছেন। তার কঠোর মনোভাবের কারণে অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় হলেও বেশির ভাগই চাইছেন ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে। তাদের এমন মনোভাবের কারণে দলের হাইকমান্ড বিকল্প উপায়ে কাউন্সিলরদের ভোট নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037500858306885