জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি ইত্যাদি বিষয়ে জাতীয় নেতারা বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকেই তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁরাই নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দেন। জাতীয় নেতাদের বেশিরভাগই একসময় ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে যারা ছাত্রনেতা, তাদের অনেকেই ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে আসবে। কাজেই ভবিষ্যতের একজন সফল রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ছাত্রনেতাদের সচেতন থাকতে হবে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য ও আদর্শ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকটাই বদলে গেছে। বর্তমান ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। তাদের অবশ্যই দলনিরপেক্ষ থেকে সমগ্র জাতির কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ছাত্রনেতারা জানার চেষ্টা করবে এবং সচেতন থাকবে। কোনো বিশেষ দলের লেজুড়বৃত্তি না করে সকল দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সম্মান করতে হবে। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির সুস্থধারা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আঞ্চলিক ও জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, জাতীয় সমস্যার প্রতি মনোযোগ কম দিয়ে ছাত্রনেতাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী করে তোলা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের মাদক, সন্ত্রাস ও সকল প্রকার দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে ছাত্রনেতাদের সচেষ্ট হতে হবে। সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগবে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে যাতে তারা দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্ররাজনীতিকে সবসময় সোচ্চার হতে হবে।
গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের কারণে ক্যামেরার সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে অনেকেই খুব সহজে পরিচিতি পেয়ে যায় এবং রাতারাতি ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এদের কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডেই বোঝা যায় যে, নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সচেতন নয়। তাদের মনে রাখতে হবে, ছোটোমুখে বড়ো কথা মানায় না অর্থাত্ জাতীয় নেতাদের মতো জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ছাত্রনেতাদের মুখে শোভা পায় না। অনেক সময় তারা নিজেদের অত্যন্ত ক্ষমতাবান মনে করে দ্রুত বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার জন্য দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবজি ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। এই ধরনের মন-মানসিকতার ছাত্রনেতা পুরো ছাত্ররাজনীতির জন্যই বিপজ্জনক। কাজেই এই বিপজ্জনক ছাত্রনেতাদের সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে লেখাপড়া করে জ্ঞানার্জন করাই তাদের প্রধান কর্তব্য। আমরা আশা করি, দেশের ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতির পার্থক্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবে।
বিপ্লব বিশ্বাস : ফরিদপুর।