ছাত্ররাজনীতিতে নিশ্চিত করতে হবে যোগ্য ও মেধাবীদের অংশগ্রহণ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একসময় দেশের ছাত্রসমাজই ছিল সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। জাতির বড়ো বড়ো অর্জনগুলোর বেশিরভাগই অর্জিত হয়েছে ছাত্রসমাজের আন্দোলন, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের ফলেই। জাতীয় রাজনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবেই ছাত্ররাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধুসহ দেশের বড়ো বড়ো রাজনীতিবিদ ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে এসেছিলেন। কাজেই আজকের ছাত্রনেতারাও ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ তৈরির একমাত্র উপায় হলো ছাত্ররাজনীতি। কাজেই দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্যই ছাত্ররাজনীতিকে ঠিক পথে পরিচালিত করা এবং সৎ, যোগ্য ও মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। শনিবার (৫ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও) 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, দুঃখজনক বিষয় হলো, দীর্ঘদিনের অপরাজনীতি, অপশাসন আর ব্যাপক দুর্নীতির প্রভাবে দেশের ছাত্ররাজনীতিও মারাত্মকভাবে কলুষিত ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এই ছাত্ররাজনীতি ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। জাতীয় রাজনীতি যেভাবে দিন দিন দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে, তেমনি ছাত্ররাজনীতির প্রতিও ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের দ্বারাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। ছাত্রনেতারাই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে ছাত্রনেতাদের অনেকেই শুধু মাদকাসক্তই নয়, বরং মাদক ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ছাত্রনেতা হতে আর নীতি, আদর্শ, সততা বা রাজনীতি চর্চার প্রয়োজন হয় না, বরং বিপুল অর্থের বিনিময়ে সহজেই যে কোনো দলের বা অঙ্গ সংগঠনের নেতা হওয়া যায়! তাই জাতীয় স্বার্থবিরোধী যে কোনো অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বর্তমান ছাত্ররাজনীতি প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের চিন্তা না করে বরং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ, চাকরিতে নিয়োগ-বদলি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণসহ বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কাজে যুক্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় মেধাবী ও দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীরা এখন আর ছাত্ররাজনীতিতে আসতে চায় না।

দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হলে ছাত্ররাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে রাতারাতি ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা যাবে না। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রগতিশীল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে হবে। যে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিতে হবে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সত্, আদর্শবান, মেধাবী ও প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হাতেই দিতে হবে ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের রাজনীতি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির মূল ভিত্তি হতে হবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু ঠিক রাখতে হবে মূল নীতি-আদর্শ। আমরা আশা করি, সচেতন ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবে এবং অসত্ ও অযোগ্যদের ছাত্ররাজনীতির অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে।

লেখক: বিপ্লব বিশ্বাস, ফরিদপুর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035638809204102