দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটি শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা না পেলে পরীক্ষা কিংবা ক্লাসে ফিরবেন না তারা। এদিকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে আজ শনিবার জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুয়েট সূত্রে জানা যায়, ঈদ ও নববর্ষের ছুটির পর গত বুধবারের পরীক্ষায় ব্যাচের ১ হাজার ২৭৯ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ২২তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ হাজার ৩০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশ নেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের যে দাবি ছাত্ররাজনীতি বিরুদ্ধে, সেটিতে আমরা অনড় রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিশিয়াল
ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরব না। আমরা পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাগুলো বর্জন করেছি। সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরলে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, ‘এই ইস্যুতে আগামীকাল (আজ) আমাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা আছে। তার আগে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বুয়েটশিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বির করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ছাত্ররাজনীতির পক্ষে রায় দিলেও বুয়েট এখনো লিখিত আদেশ
পায়নি বলে জানিয়েছেন ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের লিখিত আদেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পায়নি। আদেশ পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। মিডিয়ায় আমরা বিভিন্ন বক্তব্য শুনেছি, তবে লিখিতভাবে না পেলে আদেশে কী আছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।’গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মহড়াকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৬ দফা দাবি জানান তারা। জানা গেছে, এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কেউ কিছু না বললেও ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের দাবি এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার স্থলে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। সাজাপ্রাপ্তরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে কর্র্তৃপক্ষ। পরে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকতে দেখা যায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তবে গত ২৭ মার্চের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলের সিট বাতিল করা হলে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। পরে রাব্বির করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নোটিস এবং সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট।