ঢাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে আবারও বিতর্কিতরা

ঢাবি প্রতিনিধি |

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৮টি হল শাখার আংশিক কমিটি। তখন শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা শুরু হয় ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। গত শুক্রবার কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয় এই প্রক্রিয়া।

তবে পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়নের অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন সময় হলে শিক্ষার্থীদের মারধরে অভিযুক্ত, চাঁদাবাজ ও মাদকসেবীদের হলগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন, তাঁরা যাচাই-বাছাই করেই পদ দিয়েছেন।

হল কমিটিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কামরুজ্জামান রাজু নাট্য ও বিতর্ক উপসম্পাদক এবং হৃদয় আহমেদ কাজল সহসম্পাদক পদ পেয়েছেন। এই দুজন চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ওই হলের শিক্ষার্থী আকতারুল ইসলাম লিটনকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক নাইমুর রশিদ, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা উপসম্পাদক মাশফিউর রহমান, সংস্কৃতি সম্পাদক সফিউল্লাহ সুমন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাব্বির আল হাসান কাইয়ুম, প্রশিক্ষণ উপসম্পাদক ফিরোজ আলম অপি, ছাত্রবৃত্তি উপসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মারুফ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এঁরা সবাই হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী আখলাকুজ্জামান অনিককে মারধরে অভিযুক্ত। গত ৯ নভেম্বর আরেক শিক্ষার্থী রাসেলকে নির্যাতনকারী মোনাফ প্রান্তও কার্যকরী সদস্য পদ পেয়েছেন। এসব পৃথক ঘটনায় হল প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দিয়েছিল।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে হলের শিক্ষার্থী সামির সাদিককে গেস্টরুমে নিয়ে মারধরে অভিযুক্ত রেজভী হাসান পাঠাগার সম্পাদক পদ পেয়েছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শেখ শান্ত আলম ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, ইমদাদুল হক বাঁধন উপসংস্কৃতি সম্পাদক, সাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় উপদপ্তর সম্পাদক, নাহিদুল ইসলাম ফাগুন আইন উপসম্পাদক, শাহনেওয়াজ আরেফিন পল্লব স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পাদক এবং আরিফ হোসেন শুভ স্কুলছাত্র সম্পাদক পদ পেয়েছেন। এঁরা সবাই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু তালেবকে নির্যাতন ও মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত। এঁদের বিরুদ্ধে হল প্রশাসনের তদন্ত চলমান।

মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তুষার হোসেন সহসভাপতির পদ পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২ আগস্ট প্রজিত দাস নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ছিনতাই মামলা করেছেন। এ ছাড়া আরেক সহসভাপতি শেখ মারুফ হোসেন সুজন ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। সহসভাপতির পদ পেয়েছেন মাহমুদ অর্পণ। ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক সুষ্ময় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর হলের সন্তোষ চন্দ্র ভবনের সিঁড়িতে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন তিনি। এ ছাড়া কমিটির সহসম্পাদক ঐশিক শুভ্র চাকীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম ইয়াছির আরাফাত প্লাবন, মো. ইয়াছিন আল শাহীনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত ২৪ জুলাই রাত ১১টার দিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে না যাওয়ায় হলের ১৭৭ নম্বর কক্ষে ডেকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় হল প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল।

এ ছাড়া কমিটিতে পদ পাওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সামিউল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন বেপারী, সহসভাপতি আহসান উল্লাহ ও ফারদ্বিন আহমেদ মুগ্ধের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থী এহসান রফিককে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত হন এঁরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিতে অন্যকে দোষারোপ করার রেওয়াজ রয়েছে। কেউ কাউকে দেখতে না পারলে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করে। আমরা সেগুলো আমলেও নিয়েছি। বিভিন্নভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আমরা তাদের কমিটিতে পদায়ন করেছি। ’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের হলগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করেছি আমরা। এদের বেশির ভাগ মেধাবী, সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। হলের অভ্যন্তরে যারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলামেশা করে পারিবারিক বন্ধনের মতো জড়িয়ে রয়েছে, সুন্দর সম্পর্ক রেখেছে, তাদেরই পদায়ন করা হয়েছে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023388862609863