দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য গভীর নলকূপ (পাম্প) খনন প্রকল্পের কাজে বাধা প্রদান ও কর্মরত ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে জীবননাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে একই হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
গত বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার হলের অভ্যন্তরে কয়েক দফায় এ ঘটনা ঘটে। নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর এই কাজ আবার শুক্রবার বিকেলে শুরু হয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাইয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিমকে আহ্বায়ক করে ১ হাজার ৫০ ফুট গভীরতায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রাথমিকভাবে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তারা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জহুরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা, হলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফরিদ ও ইমাম হোসাইন জিহাদ। এদের মধ্যে কামাল উদ্দিন রানা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের, ফরিদ ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ও জিহাদ ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে অভিযোগ করে প্রকল্পের সাইড ইঞ্জিনিয়ার ইশারুল হক বলেন, গত বুধবার কাজ শুরু হলে তারাবির পর প্রজেক্ট ড্রিলার হাসিবীন আমাকে ফোনে জানায় ঝামেলা হয়েছে। পরে আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখি হলের পিছনে অন্ধকারে তাকে কাজ বন্ধের জন্য হল ছাত্রলীগের ৭-৮ জন নেতাকর্মী হুমকি দিচ্ছে। আমি ওই জায়গায় যাওয়ার পর তারা আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। পরে আমার ফোনে তারা ফোন দিয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার আতিক স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরে বিষয়টি হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এর মুছা স্যারকে জানালে তারা কাজ চালু রাখতে বলেন। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন আসাদুজ্জামান ফরিদ। এসময় জিহাদও ছিল, পরে শুক্রবার অবশ্য তিনি তার সুর পাল্টান।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমরা আবার কাজ শুরু করি। এদিন দুপুরে হল ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয়ে কামাল ভাই আমাদের কাছে এসে তার ফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ওইদিন রাত ৯টার দিকে আরেকটা গ্রুপ এসে কাজ বন্ধ করতে বলেন। তারা আমাদের লাগানো লাইট সব খুলে ফেলে দেয়। এ ছাড়া হলের দুটা গাড়িও আটকে রাখে।
এ বিষয়ে প্রজেক্ট ড্রিলার হাসিবীন বলেন, হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে হলের পিছনে নিয়ে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, হুমকি-ধমকি দেয়, এমনকি গুলি করে মেরে ফেলবেও বলে।
এ প্রসঙ্গে আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। এ পর্যন্ত কোনো কাজে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবার জহুরুল হক হলে কাজ করতে এসে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। হল ছাত্রলীগ সভাপতি কামালের নির্দেশানায় এসব ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান ফরিদ নামে একজনও ঝামেলা করেছে, গালাগাল করেছে। ছাত্র যখন ছিলাম, তখন আমিও ছাত্র সংগঠন করেছি, কিন্তু এমনটা কখনো দেখিনি। তাদের এই ব্যবহারে আমি রীতিমতো বেকুব হয়ে গেছি।
তবে, বিষয়টি অস্বীকার করে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা বলেন, তাদের সঙ্গে কেউ যেন ঝামেলা না করতে পারে সেজন্য আমি তাদের ফোন নম্বর দিয়েছি। কারণ, এর আগে হল থেকে কারা যেন গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, এজন্য প্রভোস্ট স্যার যখন আমাকে ফোন দিয়েছেন। তখন আমি স্যারকে বলেছিলাম, সমস্যা নেই স্যার, কাজ করুক তারা। তখন আমি গিয়ে বলে আসছি, কেউ সমস্যা করলে আমাকে জানাইয়েন।
এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান ফরিদ বলেন, এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি জানিও না, কী হয়েছে। আর কারা করেছে, কী করেছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
ইমাম হোসাইন জিহাদ বলেন, একটু ঝামেলা হয়েছিল। রাতে কারা যেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে রাত ১২টার দিকে শয়ন ভাই আমাকে কল দিয়ে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে বললে ওদের কাছে আমি খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাদের তাদের মতো করে কাজ করতে বলে এসেছি।
এ বিষয়ে ঢাবির প্রধান প্রকৌশল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম আবু মুছা চৌধুরী বলেন, যারা পাম্প স্থাপনের কাজে আছেন তাদের না কি কাজ বন্ধ করতে হুমকি দেয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। আমাদের অফিস খুললে দেখি কী করা যায়।
এ বিষয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম বলেন, আমি শুনেছি কে বা কারা যেন এই পাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা তাদের পরিচয় বের করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই ধরনের ঘৃণিত কাজে যদি আমার হলের কোনো শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছাত্রদের কাজ পড়ালেখা করা, তাদের কাজ এটা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে ফোন দিলেও পাওয়া পাওয়া যায়নি।