ছাত্রলীগ কর্মী হত্যা : ওয়ারেন্ট ঝুলে আছে সাত মাস, ঘুরে বেড়াচ্ছে আসামিরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মী বাবলু হত্যা মামলায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় ঝুলে আছে সাত মাস ধরে। গত বছরের ১০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও মুল আসামিদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘পলাতক’ আসামিরা। 

নিহত বাবুলের স্বজনদের অভিযোগ, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের নীলকন্ঠ গ্রামে ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান  লিটন মিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলুর (২৩) বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় গুরুতর আহত বাবলু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা করেন। ঘটনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও হামলার হুকুমদাতা ও নেতৃত্বদানকারী ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ মূল আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

পুলিশ  বলছে, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে দফায় দফায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

আদালতের নথি বলছে, উচ্চ আদালত থেকে দুই দফা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিলেও মেয়াদ শেষে আসামিরা একবারও আদালতে আত্মসমর্পণ করেনি। সর্বশেষ গত অক্টোবরে তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও গত পাঁচ মাসে ও আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। 

আদালত সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ কর্মী বাবলু হত্যার পর বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ ছয় অসামি হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেয়। মেয়াদ শেষে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া থাকলেও তারা তা করেনি। ফলে গত বছরের আগস্ট মাসে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ১১ আগস্ট পরোয়ানা সদর থানায় পৌঁছালেও আসামিদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পরোয়ানা থাকাকালীন সময়ে একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আগের জামিনের তথ্য গোপন করে আবারো হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেয় আসামি লিটন মিয়া। সেই জামিনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। এসব তথ্য নথিভুক্ত করে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখে নিম্ন আদালত। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পরোয়ানা তামিল করেনি থানা পুলিশ। অথচ পুলিশের চোখে ‘পলাতক’ এসব আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সদর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আসামি লিটন এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তিন দফা জামিন নিয়েছেন। সর্বশেষ জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি একবারও নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। অথচ প্রতিটি আদেশে মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া ছিল।

আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা জানিয়েছেন নিহত বাবলুর বাবা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছেলেকে  হারিয়েছি। বিচার পাওয়াতো দূরের কথা মূল আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। তারা প্রকাশ্যে আমার সামনে ঘুরে বেড়ায়। মামলা ফয়সালা করতে চাপ দেয়। আমি কার কাছে বিচার দেবো।

ছাত্রলীগ কর্মী হত্যাকাণ্ডের আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনটি।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ বাবলু হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আমি নিজেও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আসামি গ্রেফতারে পুলিশের হেয়ালি রয়েছে। আমার মনে হয় পুলিশ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়েছে। তা না হলে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেফতার করবে না কেনো?

আইনজীবীরা বলছেন, একই মামলায় উচ্চ আদালতের একাধিক বেঞ্চ থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নেয়ার সুযোগ নেই। আসামিরা তথ্য গোপন করে একাধিকবার জামিন নিয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উচ্চআদালতের সঙ্গে এমন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার জামিন নেয়ার সুযোগ নেই। তথ্য গোপন রেখে জামিন নেয়া আর এক ধরণের অপরাধ। আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়ে থাকলে পুলিশের উচিৎ দ্রুত গ্রেফতার করা।

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তারা এখন পলাতক রয়েছে। তবে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025241374969482