ছাত্রলীগ নেতা মুর্তজা হত্যা মামলার রায় পিছিয়ে ২০ জুন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা আলী মর্তুজা চৌধুরী হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ২০ জুন নির্ধারণ করেছে আদালত। দেড় যুগ পর মঙ্গলবার মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও ‘আদেশ প্রস্তুত না হওয়ায়’ নতুন তারিখ দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলা। মামলার আদেশ প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ২০ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন।

দেড় যুগের অপেক্ষা

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টা। হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ ছড়ারকুল এলাকায় নিজের বাসার অদূরে একটি সেলুনে বসেছিলেন ছাত্রলীগ নেতা আলী মর্তুজা চৌধুরী।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার বড় ভাই ফতেয়াবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী নাসের চৌধুরী বলেন, আমার ভাই সেলুনে বসেছিল। এ সময় সন্ত্রাসীরা এসে তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে আমরা ছুটে গিয়ে দেখি ভাই মাটিতে পড়ে আছে। 

সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচাতে পারেননি ছোট ভাই আলী মর্তুজাকে।

আলী নাসের চৌধুরী বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল তাদের সাথে আমার ভাইয়ের কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না। শুধু ছাত্রলীগ করার কারণে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আলী মর্তুজা চৌধুরী (২৬) ছিলেন সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। ঘটনার পরদিন আলী নাসের চৌধুরী হাটহাজারী থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনের মধ্য থেকে দুইজনকে বাদ দেওয়া হয়। তারা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎকালীন সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বাদ দেওয়া হয় আরেক আসামি শিবির নেতা সাইফুল ইসলামকেও। ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী। মামলার অধিক তদন্তের ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়ার আবেদনও করেছিলেন।

“আমার করা কোনো আবেদনই গৃহীত হয়নি। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার চায়নি এ মামলার বিচার হোক,” বলেন মর্তুজার ভাই আলী নাসের।

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে অন্য তিনজনকে যুক্ত করে মোট আটজনকে আসামি করা হয়। এরা হলেন- ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডার হাবিব খান, হাসান, ইসমাইল, গিট্টু নাছির, আইয়ুব আলী, সাইদুল ইসলাম, তসলিম উদ্দিন মন্টু এবং আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর। এদের মধ্যে হাবিব খান শুরু থেকেই পলাতক। জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন হাসান ও ইসমাইল।

র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন গিট্টু নাছির। গণপিটুনিতে মারা যান আইয়ুব আলী এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সাইদুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে তসলিম উদ্দিন মন্টু এবং আলমগীর কারাগারে আছেন। এর মধ্যে মন্টুকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়। আলমগীর কুমিল্লা কারাগারে আছেন। এই আট আসামির বিরুদ্ধে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় দুই বছর আগে। এরপর দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।

সর্বোচ্চ শাস্তির আশায় স্বজনরা

মর্তুজার ভাই আলী নাসের চৌধুরী বলেন, আশা করি আমাদের অপেক্ষার অবসান হবে। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে মর্তুজা ছিল সবার ছোট। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আমার বাবা মারা যান। এক দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেও তিনি ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি। এই দুঃখ নিয়েই তিনি মারা গেছেন। আমরা চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি। তা হলে আমার আব্বার আত্মা শান্তি পাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032539367675781