রনির ভয়ে বাড়িছাড়া চড় খাওয়া ব্যক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চড় মারার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নুরুল আজিম রনির ভয়ে বাড়িছাড়া কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়া। নিজের বাসা ছেড়ে তিনি এখন পরিবার নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকছেন। নিরাপত্তা চেয়ে রাশেদ বৃহস্পতিবার(১৯ এপ্রিল) রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

সংগঠন থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হওয়া চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক  নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের আরেক কর্মীর নাম উল্লেখ করে পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগটি করেন রাশেদ মিয়া। অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাত-আটজন জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।

পাঁচলাইশ থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, নুরুল আজিম ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টারে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি। না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর ১৩ এপ্রিল নগরের মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় রাশেদকে একা পেয়ে মারধর করেন নুরুল আজিম ও ছাত্রলীগ কর্মী নোমান চৌধুরী। এ সময় তাঁরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। টাকা নেই জানানো হলে নুরুল আজিমের নির্দেশে নোমান চৌধুরী সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়ে রাশেদের স্ত্রীর পাসপোর্টসহ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। বাকি টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

রাশেদ মিয়া বলেন, নুরুল আজিমের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও মারধরের ঘটনায় মামলা করার পরপরই তিনি (নুরুল আজিম) লোকজন নিয়ে তাঁর বাসায় যান। সেখানে না পেয়ে তাঁর কোচিং সেন্টারে যান। বাসায় কাউকে না পেয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। এ কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জীবননাশের আশঙ্কায় তিনি বাসায় না থেকে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে নুরুল আজিমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদের কাছে তিনি সাড়ে নয় লাখ টাকা পাবেন। ওই টাকার জন্য কোচিং সেন্টারে গিয়েছিলেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল  ৫টা ২৬ মিনিট থেকে ৩২ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রাশেদ মিয়া কোচিং সেন্টারে তাঁর কার্যালয়ে বসে আছেন। সেখানে ঢুকে নুরুল আজিম উত্তেজিত হয়ে যান। একপর্যায়ে রাশেদ মিয়ার চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন। এরপর চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। ছয় মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, রাশেদ মিয়াকে ১৩টি চড় মারেন নুরুল আজিম। এ সময় হাত জোড় করে ছিলেন রাশেদ মিয়া।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম কোচিং সেন্টারের পরিচালককে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তার জন্য যা করার সব করবে পুলিশ। আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। নুরুল আজিমকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, উত্তরে পরিদর্শক তদন্ত বলেন, তাঁরা দেখছেন।

এর আগেও ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহেদ খান বাদী হয়ে নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছিলেন। প্রবেশপত্রের সঙ্গে উন্নয়ন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৯ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে নুরুল আজিমের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সেদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩১ মার্চ বাড়তি ফি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় ৩১ মার্চ দুপুরে নুরুল আজিম আবারও ওই কলেজে যান। তখন টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে নুরুল আজিম ও তাঁর কর্মীরা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

গতকাল রাত আটটার দিকে নুরুল আজিমকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান। নুরুল আজিমও তাঁর ফেসবুক পাতায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনপত্রটি দেন।

নুরুল আজিমের চড় মারা, চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। যাঁরা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে আছেন, তাঁদের সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে রাজনীতি করা উচিত। নইলে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল এই সুযোগটি কাজে লাগাবে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053350925445557