রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রলীগের পদধারী আবাসিক ছাত্রীদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে থানায় নিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এক প্রাধ্যক্ষ। ছাত্রলীগের পদধারী ছাত্রীদের হুমকি দেওয়া ওই প্রাধ্যক্ষের নাম অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ। তিনি ছাত্রীদের উদ্দেশে এই মন্তব্য করার কথা স্বীকার করে বলেছেন, আসলে এভাবে মন্তব্য করাটা ঠিক হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ওই হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি ওই হুমকি দেন। ওই সভার ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপে প্রাধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ার কথা শোনা যায়। ওই হলের এক আবাসিক ছাত্রী সাংবাদিকদের অডিও ক্লিপটি সরবরাহ করেছেন।
ছাত্রলীগ নেত্রীদের উদ্দেশে প্রাধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, ‘স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। তোমাদের তো অস্তিত্ব থাকার কথা না, তোমাদের তো মাথামুণ্ডু আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা। তোমাদের তো সেটা হয় নাই। সেদিন তোমাদের একটা ডিসিশন দেয়ার পরও তোমরা যাও নাই। এতে তোমরা আইন ভঙ্গ করেছ। তোমাদের হল থেকে বহিষ্কার করার জন্য সিম্পলি এই অভিযোগটাই যথেষ্ট।’
হলছাড়া করার হুমকি দিয়ে অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ফোর্স, সেনাবাহিনী সকল কিছু রেডি আছে। তোমরা যদি উল্টাপাল্টা কিছু করো, তাহলে প্রত্যেকটা মেয়েকে এখান থেকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে চালান দেওয়া হবে। সকল কিছু আমাদের কাছে আছে। আমাদের রূঢ় হতে বাধ্য কোরো না। তোমাদের স্পর্ধা এটা। একজন প্রভোস্ট যখন কোনো অর্ডার করেন, সেটা আইন। তোমরা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছ।’
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগের পদধারী শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে সময় বেঁধে দেন। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে তাঁদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা হল ছাড়েননি। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বেলা ১১টায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকটি হলের প্রাধ্যক্ষসহ হল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে। সেখানেই ছাত্রলীগ পদধারী ছাত্রীদের উদ্দেশে নানা ধরনের মন্তব্য করেন অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার বলেন, হলের ১২৮ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও নির্যাতন করার অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগ পড়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত করতে তিনি (অধ্যাপক জামিরুল) এসব কথা বলে ফেলেছেন। তবে দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে সেগুলো বলা ঠিক হয়নি।
অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই এসব অভিযোগ করেছিল। সেগুলো আমি তাদের বলেছি। যদিও এভাবে বলা আমার ঠিক হয়নি। আরও সুন্দরভাবে বলা যেত। শিক্ষার্থীরা তখন কথা শুনছিল না। আর আমারও মিটিংয়ের তাড়া ছিল। এ জন্য কথাগুলো এমন হয়ে গেছে।’
উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘ বিষয়টি আমি অবগত নই। আমি বিষয়টি দেখব।’