সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের আগে তার স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল ধর্ষকরা। ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে ধর্ষিতার কানের স্বর্ণের দুল ও গলার চেইন এবং স্বামীর মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের নিচে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব জানান ধর্ষিতার স্বামী। তিনি আরও জানান, শুক্রবার বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হই। ইচ্ছা ছিল সন্ধ্যার মধ্যেই বাসায় ফিরব। শাহপরান থেকে ফেরার পথে এমসি কলেজের গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে সিগারেট নিয়ে আসি। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গাড়িতে ওঠার পর পেছন থেকে একজন বলেন, এই দাঁড়াও। তখন স্ত্রীকে বললাম, গাড়ির গ্লাসটা একটু নামাও কথা বলব। তারা বলেন না নেমে আস। গাড়ি থেকে নামার পর তারা দু’জন (সাইফুর ও অর্জুন) জিজ্ঞেস করে গাড়িতে কে? বললাম আমার স্ত্রী। তখন তারা গালি দিয়ে বলেন, ‘তুই দালালির ব্যবসা করছ এবং বলেই থাপ্পড় মারে আমাকে। তখন আমার স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে আমার স্বামীকে মারছ কেন? চিল্লাচিল্লি শুরু করলে তারা বলে গাড়িতে উঠ তোদের থানায় নিয়ে যাব। ভয় দেখিয়ে তারা তিন-চারজন আমার গাড়িতে উঠে। আমাকে নিয়ে তারা পেছনে বসে আর স্ত্রীকে সামনে বসিয়ে তাদের একজন গাড়ি চালায়।
বললাম ঠিক আছে আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে যাও, কোনো সমস্যা নেই। তারা বালুচর মাঠের বিপরীতে ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তার কালভার্টে গিয়ে বলে তুই মানিব্যাগ বের কর। টাকা দে ৫০ হাজার। বললাম আমার কাছে তো এত টাকা নেই। দুই হাজার টাকা আছে নিয়ে নাও। এরপর আমাকে মারধর করে। স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাদের একজন আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন ধর্ষিতার স্বামী। স্ত্রীর চিৎকার শুনে বলি এরকম তো ঠিক না ভাই। এরপরই আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। মাথায় কাজ করছিল না। তখন চিৎকার শুনে ছাত্রাবাসের দোতলা থেকে একজন লোক তাকিয়ে ছিল। ওরা বলল কে? তিনি বলেন ভাই আমি। তারা তাকে চিনে ফেলেন, বলে চলে যাও। তখন তিনি চলে যান। আমরা কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বের হই। রাস্তায় এক সিএনজি ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল ভাই কী সমস্যা?
তাকে বললাম ভাই কোনো সমস্যা নাই, আর পারলে আমাকে ১০০ টাকা দেন আর আমাদের একটু পৌঁছে দেন। সিএনজির ড্রাইভার টাকা দিয়ে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিল। হঠাৎ আমার চেতনা ফিরে আসে। মাথা ঠিক হল। এরপর আর সিএনজিতে যাইনি। আমার দুলাভাইয়ের বন্ধু কমিশনার স্যার। তাকে ফোন দেয়ার পর স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, একজন মহিলা পুলিশ ফোন দেবে তার কাছে সব বল। এরপর মহিলা পুলিশ ফোন দেন। এরপর শাহপরান থানার এসি, ওসি স্যার কথা বলেন। এরপর তারা ২-৩ গাড়ি ভরে চলে আসেন। ধর্ষকরা পালিয়ে যাওয়ার পর এসি, ওসিসহ পুলিশের লোকজন এসে তল্লাশি চালান। দোতলা থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই লোককে ডেকে এনে ধর্ষকদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। তিনি পাঁচজনের নাম-পরিচয় বলেন। সবার চেহারা আমার মনে আছে। পরে মিডিয়ায় তাদের ছবি এলে ধর্ষকদের শনাক্ত করি।