কুমিল্লার মুরাদনগরে দু’বছর পার না হতেই আবারও মাদরাসার আবাসিক ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হাসানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক প্রধান শিক্ষক হাসানের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে অধ্যক্ষ হাসানকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে আটক করা হয়।
আটক হওয়া মাওলানা মো. হাসান উপজেলা সদরের উম্মে হানী মহিলা মাদরাসার অধ্যক্ষ। অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ, মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালে অধ্যক্ষ হাসানকে তার মাদারাস থেকে আটক করে পুলিশ।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.সাদেকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসানকে আটক করা হয়েছে। তাকে জেলহাজতে প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ হাসান তার ১ শত টাকা চুরি হয়েছে এই অভিযোগ এনে হেফজ বিভাগের ১০ বছরের এক ছাত্রীকে তার অফিস রুমে ডেকে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আটকপূর্বক কারাগারে পাঠানো হয় হাসানকে। পরে সেই মামলায় জামিনে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন হাসান। বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার মাদরাসার সকল শিক্ষকদের কাছে জানান শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালে মিটিং ডেকে যৌন হয়রানির বিষয়টি সামাধান করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষকরা। শনিবার সকালে মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত হওয়ার আগেই সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে সেখানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে গেলে তাদের উপরে অজ্ঞান করার স্প্রে করেন হাসান। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বাকিরা দৌড়ে মাদরাসার ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানতে পেরে পুরো মাদরাসা এলাকা ঘিরে ফেলে। বিষয়টি মুরাদনগর থানা পুলিশ জানতে পেরে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিভাবক ও স্থানীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ওই মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ হাসানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করত। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর অনেককে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই মাদরাসা থেকে বেড় করার অভিযোগও পেয়েছি বহুবার। এ ব্যাপারে সকল শিক্ষকরা তাকে চাপদিলে সে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বিকার করতেন। পাশাপাশি মাদরাসার একটি রুমে এতিম ছাত্রীকে বিত্তশালির সাথে রাতভর তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগও পেয়েছি হাসান সাহেবের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার সকালে আমরা সবাই বসে প্রধান শিক্ষক হাসান সাহেবের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ছিলো।