ছাত্রীরা কেমন আছেন কেউ জানে না : জরায়ু ক্যান্সারের ভুয়া ভ্যাকসিন

মিথিলা মুক্তা |

জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা হিসেবে পরিচিত সারভারিক্স যে বাংলাদেশে আমদানিই হয় না তা জানার কথা নয় কোমলমতি ছাত্রী ও নারীদের। তারা জানতেন না গত তিন বছরে এমন কোনো ভ্যাকসিন আমদানিই হয়নি দেশে। আর এই সুযোগে ছয় হাজার স্কুলছাত্রী ও নারীর শরীরে ভুয়া ভ্যাকসিন পুশ করে দেয় একটি অসাধু চক্র। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অনুমতির ধারও ধারে নি তারা। এই গর্হিত অপরাধ কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে রাজধানীর দারুস সালামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, দক্ষিণখানের আল নূর ফাউন্ডেশন ও টঙ্গীর চেরাগ আলীর পপুলার ভ্যাকসিন সেন্টার। ভারত থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় হেপাটাইসিস-বি ভ্যাকসিন এনে দশভাগে ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভ্যাকসিন আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে পুশ করা হতো শরীরে।

এভাবে ছাত্রীরা না জেনেই বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়লেও বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় অসাধু চক্র। গত মার্চে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এমন টিকাদান কর্মসূচিকে অবৈধ বলে চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞাও দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু, তারপর এ নিয়ে আর কোনো অভিযান বা পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। ওই অবৈধ টিকাদান কর্মসূচিও সম্ভবত বন্ধ করা যায়নি। তাই গত সোমবার আবারও গত ২২ মার্চের নির্দেশনাটি নতুন করে জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। 
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত আদেশটিতে বলা হয়েছে, সারভারিক্স ভ্যাকসিনের নকল লেবেল লাগিয়ে একটি চক্র নকল করছে, যা গত ১৬ মার্চ সিআইডি জব্দ করেছে। গত ১৮ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মিরপুর দারুস সালাম থানা এলাকার এ আর খান ফাউন্ডেশনে এ ভুয়া ভ্যাকসিন মেয়েদের দেয়া হতো বলে আলামত পেয়েছে। গাজীপুর জেলায় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে নকল ভ্যাকসিনের প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

আদেশে আরো বলা হয়, স্কুল কলেজে বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাক্সিনেশন করার জন্য বলা হলে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুর্বানুমোদন থাকা আবশ্যক। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। 
দৈনিক আমাদের বার্তাকে জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

গত মার্চে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ জানান,  অসাধু ভ্যাকসিন চক্রের একজন ভারত থেকে অবৈধভাবে হেপাটাইটিস-বি টিকা বাংলাদেশে আনতো এবং সেটি সে তার নিজের বাড়িতে মজুদ করতো। ভারত থেকে আনার সময় এটির দাম পড়তো ৩৫০ টাকা করে। পরে তার বাড়ি থেকে এই টিকা নিয়ে যাওয়া হতো কেরানীগঞ্জের একটি কারখানায়।

সেখানে হেপাটাইটিস-বি টিকার শিশি ভেঙে সেটি দিয়ে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা সারভারিক্সের নকল তৈরি করা হতো। হেপাটাইটিস-বি এর একটি টিকা থেকে তৈরি করা হতো ১০টি জরায়ু মুখের ক্যান্সারের নকল টিকা। যার প্রত্যেকটি বিক্রি করা হতো ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। কেরানীগঞ্জের কারখানা নকল টিকা তৈরির পর সেটি এই চক্রের বাকি চার সদস্য বাজারজাত করতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চক্রটি ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণার মাধ্যমে নকল টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতো। গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রচারণা করেছে তারা। 

এদিকে যেসব ছাত্রীর শরীরে ভুয়া ভ্যাকসিন পুশ করা হয়েছে এখন পযন্ত তাদের শরীরের অবস্থা জানা সম্ভব হয়নি। সেটা জানতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না তাও জানা যায়নি।  

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026590824127197