ছাত্রীসহ দুজনকে মা*র*ধরের অভিযোগ জবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

জবি প্রতিনিধি |

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুইজনকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের চারুকলা বিভাগের উম্মে তহমিনা জেরিফ মিশু এবং অপরজন একই ব্যাচের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশনের শিক্ষার্থী ছোলায়মান খান। 

এ ঘটনায় বুধবার ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নিকট পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় গেছে, সাদেক খান, শুভ সাহা ও শরিফুল ইসলাম হিমু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত সাদেক হাসান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদার্থবিজ্ঞান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

  

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় টিএসসির পেছনে ছোলায়মান আর তার বন্ধু মিশু চা শেষ করে কাপ দিতে যায়। তখন সেখানে বসার টুল না থাকায় এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাদেকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে শুরু করে। তখন মিশু বুঝাতে গেলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

ছোলায়মান থামাতে গেলে সাদেক তাকে তেড়ে আসে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১২ ব্যাচের হিমু ও শুভ সহ আরও ৪ থেকে ৫ জন। তারা পূর্বের কোন ঘটনা না জেনেই তাদের উপর চড়াও হয় ও বাকবিতণ্ডা শুরু করে। তারা এক পর্যায়ে মিশুকে হুমকি দেন।

এ সময় মিশুকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে, তুই ছেলে হলে তোকে মাটিতে পিসিয়ে ফেলতাম। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তারা স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করলে হিমু ও শুভ মিশুকে মারতে উদ্যত হয়। ছোলায়মান বাধা দিতে গেলে তার উপর আক্রমণ করে। তাকে মারতে দেখে মিশু বাধা দিতে যায় তখন সাদেক মিশুকে আঘাত করে।

ছোলায়মান মিশুকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাদেক তাদের দুইজনকে মারতে মারতে গলি থেকে রাস্তায় নিয়ে আসে। এতে ছোলায়মান মাথায়, হাতে এবং ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত পায়। ঘটনাস্থলে তার জুতা ছিঁড়ে যায় এবং চশমা পড়ে ভেঙ্গে যায়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জেরিফ মিশু বলেন, ‘আমাকে সবাই মিলে হাত তুলে মারতে উদ্যত হয়। আমার সঙ্গে থাকা বন্ধু আমাকে বাঁচাতে গেলে তার গায়ে হাত দেয় এবং ধাক্কাতে থাকে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেয় এবং কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমার বন্ধু আমাকে মার থেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দুইজনকে মারতে মারতে রাস্তায় নামিয়ে আনে। এমনকি পরবর্তী সময়ে আমার বন্ধুকে আরও মারধর করার হুমকি দেয়।’

আরেক ভুক্তভোগী ছোলায়মান খান বলেন, ‘সাদেকসহ ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে টেনে হেঁচড়ে মারধর করে এবং আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং আমাদের ওপর হয়ে যাওয়া এমন নিকৃষ্টতম অত্যাচারের একটি বিচার হোক এটিই আমার চাওয়া। তাছাড়া এমন বিধ্বংসী শিক্ষার্থীদের আগ্রাসন থেকে আশ্রয় কামনা করছি।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত সাদেক খানকে বারবার কল দেয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অপর অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম হিমু বলেন, ‘ওই মেয়ের সাথে আমার কোন বাকবিতন্ডা হয় নাই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আমরা ফটোকপির দোকানে গিয়ে দেখি আমাদের ছোট ভাইদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, আমি গিয়ে জানতে চাইলে তর্ক হয়। ওই মেয়ে জুনিয়র হয়ে আমাদের উপর কয়েকবার জুতা তুলেছে। গরম চা ছিল, তা ছুরে মারেছে, আমার কলার ধরেছে। তখন আমি সিনিয়র হিসেবে ওই ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছি।’

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শুভ সাহাকে বারবার কল দেয়া হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে প্রক্টর অফিস থেকে আমাকে কিছু এখনও জাননো হয়নি। বিষয়টি কি হয়েছে তা দেখে জানাবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবার অভিযোগ দিতে বলেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052027702331543