ছাত্রী ধর্ষণের দায় আদালতে স্বীকার করলেন সেই মাদরাসা শিক্ষক

নেত্রকোণা প্রতিনিধি |

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় গ্রেফতার সেই মাদরাসা শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা এবার আদালতে স্বীকার করেছেন। শনিবার ( ৬ জুলাই) বিকেলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সোহেল ম্রংয়ের আদালতে আবুল খায়ের বেলালী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহজাহান মিয়া।  

এর আগে শুক্রবার ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ি এলাকায় ‘মা হাওয়া (আ.) কওমী মহিলা মাদ্রাসার’ শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানালেও পরে তা সংশোধন করে বলা হয়, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একইদিনে দুটি ধর্ষণের মামলা হয়েছে।

এই দুই ঘটনায় স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, প্রথমে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে ওঠে। পরে আমরা ওই ছাত্রীটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলে জানতে পারি ধর্ষণের কথা। এছাড়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তার আবুল খায়ের বেলালী।

তিনি জানান, গত এক বছর ধরে এই মাদরাসায় আছেন আবুল খায়ের। মাদরাসাটিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৩৫ জন ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন মাদরাসার আবাসিক ছাত্রী। শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালীও থাকেন মাদরাসার আবাসিকে।

এই এক বছরে আবুল খায়ের বেলালী মাদরাসার আট ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

বেলালীর যৌন নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সময় সুযোগ বুঝে নিজের কক্ষে পছন্দমতো কোনো ছাত্রীকে ডেকে নিতেন। পরে তার হাত-পা টিপে দিতে বলতেন। এক পর্যায়ে ওই শিশুকে ধর্ষণ করতেন এবং কাউকে কিছু না বলতে শপথ করাতেন, ভয় দেখাতেন।

বয়ানে সুবক্তা এই মাওলানা বেলালীর শিকার শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে, বলেন শাহজাহান মিয়া।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার ধর্ষণের শিকার  আট বছর বয়সী মেয়েটি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার মা চট্রগ্রামে গৃহকর্মীর কাজ করেন। মাদরাসাটির ছাত্রী নিবাসে থেকে লেখাপড়া করে সে। সকালে খায়ের মেয়েটিকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে।

এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে আটক করে পিটুনি দেয়।পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে খায়েরকে গ্রেফতার করে।

কেন্দুয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সকালে মা হাওয়া (আ.) কওমী মহিলা মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেলালীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মেয়েটির চাচা। এর আগে বেলালীকে এলাকাবাসী পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বলে ওসি জানান।

তিনি আরও বলেন,  একই দিন আরেক ছাত্রীর বাবাও বেলালীর বিরুদ্ধে তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন।

ওসি জানান, মেডিকেল পরীক্ষার জন্য দুই ছাত্রীকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য ওই দুই ছাত্রীকে বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।   

গ্রেফতার মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী ওই মাদরাসার মোহতামিম (পরিচালক) এবং সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের সোণাকানী গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026390552520752