ছাত্র এক, সাপেভরা গ্রাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |
আট বছর ধরে একটাই রুটিন রজনীকান্ত মেন্ধের। ১২ কিলোমিটার কাদামাখা রাস্তা মোটরবাইকে পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছান তিনি। রাস্তার দু’পাশে ৪০০ ফুট খাড়া ঢাল। আর এখন স্কুলে মাত্র এক জনই ছাত্র। ২৯ বছরের রজনীকান্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক। পুনে থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে ভোর বলে একটি জায়গা। সেখানকার চন্দর গ্রামে পড়াতে যান রজনী।
 
এখানে মানুষের চেয়ে সাপ বেশি! ১৫টি কুঁড়েঘরে বাসিন্দার সংখ্যা ৬০। আট বছর ধরে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। প্রথম দিকে ১১ জন পড়ুয়া ছিল। কমে কমে ঠেকেছে মাত্র একটিতে। ছাত্রের নাম যুবরাজ সাঙ্গালে। তাকেও বাবা-বাছা বলে পড়াতে হয়। বেশির ভাগ দিনই মাস্টারমশাইকে ছাত্রের খোঁজে এ দিক ও দিক দৌড়ে বেড়াতে হয়। গ্রামে পৌঁছে তিনি দেখেন, আট বছর বয়সি ওই ছেলে হয় গাছের আড়ালে, নয় তো নিজের ঘরে। তবুও ধৈর্য হারান না রজনী। বলেন, ‘ওর অনিচ্ছেটা বুঝি। বন্ধু ছাড়া স্কুলে কারও ভাল লাগে? এই বয়সে বাচ্চারা খেলবে। আর ও স্কুলে শুধু আমায় দেখে!’

জাতীয় সড়ক থেকে নেমে চন্দরের পথে যেতে বর্ষাকালে অবস্থা আরও চরমে ওঠে। ছোট্ট গ্রামটি শারদ পাওয়ার কন্যা এবং সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের নির্বাচনী এলাকায়। কিন্তু সুপ্রিয়াকে কোনও দিন চোখে দেখেননি বলে দাবি গ্রামবাসীদের। ‘সরকার! শুধু বোঝা যায় পোলিও খাওয়াতে এলে’, বলেছেন এক বাসিন্দা। গরু চরিয়ে, পাথর ভেঙে ওদের দিন গুজরান।

 
এ গ্রামে স্কুলে যায় না কেন কেউ? রজনী বলেন, ‘উঁচু ক্লাসের পড়ার জন্য ওদেরও ১২ কিলোমিটার এই ভয়ঙ্কর রাস্তা পেরোতে হবে। মেয়েদের তো সব গুজরাটে দিনমজুর করে পাঠিয়ে দেয়। অনেক বলেছি। কেউ শোনে না।’
 চন্দর গ্রামের স্কুল তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। কয়েক বছর আগে ছিল শুধু চারটে দেওয়াল, ছাদও ছিল না। এখন ওপরটা অ্যাসবেস্টসে ঢাকা। এক দিন ওই খান থেকেই সাপ পড়ল এসে রজনীর গায়ে! কাদা রাস্তা দিয়ে আসার সময়ে এক দিন মাস্টারমশাই নিজেই সাপের ঘাড়ে। এখন বলছেন, ‘তৃতীয় বার কিছু হলে আর বাঁচব না!’
 
তবু সব কিছু অগ্রাহ্য করে লড়ে যাচ্ছেন রজনী। পাঁচ বছরের আগে বদলি হয় না। তাও পদ শূন্য হলে তবেই। আপাতত চন্দরেই আটকে আছেন তিনি।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035281181335449