বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা বর্তমান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মধ্য থেকে আসা ভিন্নমত দমনের পথকে প্রশস্ত করবে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা। শনিবার (১২ অক্টোবর) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার। একইসাথে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তাঁরা।
বিবৃতিতে ছাত্র নেতারা বলেন, 'আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সারাদেশের ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ ও আন্দোলনরত। এ নৃশংস ঘটনায় সারাদেশের বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আবারো প্রকাশ্যে এসেছে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলো ছাত্রলীগ দখলে নেয়। একচ্ছত্র ক্ষমতা চর্চার অংশ হিসেবে চলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদকব্যবসা। চলে ভিন্নমত ও অন্যান্য ছাত্রসংগঠনসমূহের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া একজন ছাত্রকে বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের মাধ্যমে হলে উঠতে হয়। একটি ছোট রুমে ২৫-৩০ জনকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এসব ছাত্রদের মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হয় ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে। আর এ অত্যাচার চলে হলের গেস্টরুমে বা টর্চার সেলে। এ প্রক্রিয়ায় ক্যাম্পাসে ভিন্নমত দমন করা হয়। ভারতের সাথে সম্প্রতি বাংলাদেশের সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি নিয়ে আবরার ফাহাদ সমালোচনা করায় তাই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার।'
বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেন, 'শুধু আবরার ফাহাদ হত্যাই নয়, সারাদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাস চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। কিন্তু দিনের পর দিন প্রশাসন এই সব নির্যাতনের ঘটনা উপেক্ষা করে গেছে। গেস্টরুম-গণরুমের অত্যাচার বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং বিভিন্ন সময় আমরা ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। প্রশাসন ও শিক্ষকদের একটা বিরাট অংশ ক্ষমতাসীন দলের কাছে আত্মসমর্পণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আর সুযোগে ক্ষমতাসীন দলগুলো তাদের জবরদস্তির শাসনব্যবস্থাকে নিষ্কণ্টক রাখতে ছাত্র সংগঠনকে একটা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে তৈরি করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনো আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে। তাই ক্ষমতাসীন সংগঠন হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। একের পর এক বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দমন-পীড়ন, হত্যা-খুনের সাথে জড়িত হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের পর দেশের প্রধান ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থারই চিত্র।'
বিবৃতি বলা হয়, 'ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে একদল শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি ভেবে ভুল করছেন। তাই তারা মনে করছেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলেই বুঝি সন্ত্রাস বন্ধ হবে। কিন্তু যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইনত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ সেখানে কি ছাত্রলীগের দাপট-দৌরাত্ম-সন্ত্রাস নেই? বাস্তবে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছাত্র রাজনীতি নয়। ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি। বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শহীন দেউলিয়াপনার অংশ এই একটি ধারা। ছাত্র রাজনীতির আরেকটি ধারা আদর্শবাদী। যারা শক্তিতে সংখ্যায় কম হলেও অতীত দিনের ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ধারার উত্তরাধিকার বহন করে এখনও শিক্ষার অধিকার রক্ষা ও দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে। তাই গোটা দেশের রাজনীতি যেখানে দুবৃত্তায়িত, ফ্যাসিবাদী শাসনের কবলে পতিত দেশ। সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্ররাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে না। বরং এই রাজনীতিকে পরিশুদ্ধকে ছাত্ররাজনীতি আদর্শবাদী ধারাকে শক্তিশালী করতে হবে।'