নতুন শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এর আলোকে এখন চলছে নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরির কাজ। কিন্তু সত্যি, অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সফটকপি ইতোমধ্যেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে! বইয়ের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবিতে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়তপন্থী শিক্ষা ক্যাডার ও স্থায়ী কর্মচারীদের মাধ্যমে এই অপকর্ম ঘটেছে বলে অধিকাংশ কর্মকর্তার মত। কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপিন্থী মুদ্রাকর হিসেবে পরিচিত তোফায়েল খানসহ অনেকেই দিকেই সন্দেহের তীর। তবে, বরাবরে মতোই এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বলা হয়েছে, বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণের আগেই সফটকপি অনলাইনে তুলে ধরা গ্রহণযোগ্য নয়, অনৈতিকও বটে। এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদ্বোধনের পর সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন। এরও পরে বইয়ের সফটকপি শুধু এনসিটিবির ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হতো। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণের আগেই সফটকপি অনলাইনে দেওয়া অনৈতিক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষকদের একটি গ্রুপে এসব পাঠ্যবই পোস্ট করে একজন লিখেছেন, নতুন কারিকুলাম ২০২৪-এর অষ্টম-নবম শ্রেণির বইয়ের পিডিএফ (সফটকপি) অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ওই লিঙ্কে শিক্ষক ছাড়াও অনেকেই বই খোঁজ করছেন। নতুন কারিকুলামের সমালোচনাও করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে। অনলাইনে প্রাপ্ত একটি লিঙ্কে দেখা গেছে, অষ্টম শ্রেণির ১০টি এবং নবম শ্রেণির ৯টি বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যাচ্ছে, তবে এগুলোয় প্রতি পৃষ্ঠায় জলছাপ রয়েছে ‘ড্রাফট কপি’।
অনলাইনে বেশি সমালোচনা চলতে দেখা গেছে অষ্টম শ্রেণির গণিত বই নিয়ে। এতে গতানুগতিক বীজগণিত, পাটিগণিত নেই মন্তব্য করে অভিভাবকরাও ছুড়ে দিচ্ছেন মন্তব্য- ‘এই বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?’ বইটির পাঠ্যসূচিতে উল্লেখ রয়েছে, গাণিতিক অনুসন্ধান, দৈনন্দিন কাজে বাস্তব সংখ্যা, ঘনবস্তুতে দ্বিপদী ও ত্রিপদী রাশি খুঁজি, ক্ষুদ্র সঞ্চয় ভবিষ্যৎ গড়ি, জমির নকশায় ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ, অবস্থান মানচিত্রে স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, বৃত্তির খুঁটিনাটি, পরিমাপে প্রতিসমতার প্রয়োগ, বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি, তথ্য বুঝে সিদ্ধান্ত নিই’ প্রভৃতি।
নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে অষ্টম-নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ছাপার আগে ভাইরাল হলো কীভাবে? এমন প্রশ্নে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জানান, তিনি এখনো জানেন না। বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত একজন কর্মচারী চেয়ারম্যানের দপ্তরে রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি আবার কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাও।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ছাপার পর এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পুস্তকের সফটকপি তুলে দেওয়া হয় যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা প্রয়োজন হলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। তিনিও বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, যে বই এখনো ছাপানোই হয়নি, সেটি কীভাবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলো? এটি উদ্দেশ্যমূলক কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে, জানান তিনি।
নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রণীত অষ্টম-নবম শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ধারণা দিতে ইতোমধ্যে মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশিক্ষণে পাঠ্যবইয়ের ড্রাফট কপি ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণকালে কোনো শিক্ষক হয়তো এগুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারেন। ড্রাফট কপি আর ফাইনাল কপির মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?Ñ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা জানান, তেমন তফাত নেই। খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কোথাও বড় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকলে শুধু সেটুকুই সম্পাদনা করা হয়।
চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। এ জন্য অন্যান্য শ্রেণির পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এ চারটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও বই প্রণয়ন করে ছাপানোর কাজ করছে এনসিটিবি, যা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার।