দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৪৪১ জন রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়া অননুমোদিত ছুটিতে আছেন আরও ৪৯ শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট বিশেষ করে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের অভাব বেশি। এমন পরিস্থিতিতে জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে বা যারা আছে তাদের দিয়েই চলছে সেখানকার লেখাপড়া। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজার ৩৯৯ জন। এর মধ্যে কর্তব্যরত শিক্ষক রয়েছেন ১১ হাজার ৭৯২ জন, শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ২ হাজার ৪৪১ জন, প্রেষণ বা লিয়েনে আছেন ১৭১ জন, বিনা বেতনে ৯২ জন, অননুমোদিত ছুটিতে রয়েছেন ৪৯ জন এবং খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক আছেন ১ হাজার ৮৫৪ জন।
জানা গেছে, শিক্ষক সংখ্যা বেশি হওয়ার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ছুটির তালিকায় সবার ওপরে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২৯৯ শিক্ষকের মধ্যে ৩৫৫ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫১০ শিক্ষকের মধ্যে ১১৬ জন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩৩ জনের মধ্যে ৭৭ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। তবে তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮১ শিক্ষকের মধ্যে কেউই শিক্ষা ছুটিতে নেই।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটির তালিকা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৭৬৪ জনের মধ্যে ১৭২ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ৩১৮ জনের মধ্যে ৮৬ জন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৪৬৩ জনের মধ্যে ১০৮ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ৪১৩ জনের মধ্যে ১২৬ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২৬৫ জনের মধ্যে ৭৮ জন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ৩৩৩ জনের মধ্যে ৮৫ জন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৩১৩ জনের মধ্যে ৯৬ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মোট সংখ্যার একটি বড় অংশ শিক্ষা ছুটিতে আছেন।
এদিকে অননুমোদিত ছুটির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক অননুমোদিত ছুটিতে রয়েছেন। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, আগে কী হয়েছে জানি না। তবে উপাচার্য হয়ে আসার পর অননুমোদিত ছুটি কমে এসেছে।
এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন করে ১২ জন; শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন করে তিন শিক্ষক অননুমোদিত ছুটি ভোগ করছেন।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, শিক্ষকরা নিজেরা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। শিক্ষা ছুটি চাইলে তাদের তো বাধা দিতে পারি না। সরকার ও ইউজিসি চাইলে এ বিষয়ে নীতিমালা করতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কয়টি বিভাগ আছে তাতে পড়ানোর জন্য ৬শর বেশি শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষক আছেন তিনশর মতো। এর মধ্যে একটি বড় অংশ আবার ছুটিতে। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী শিক্ষক না দেওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ইউজিসি বলছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে যেতে পারেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তবে এর চেয়ে বেশি হলে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যেখানে বেশি শিক্ষক রয়েছে, সেখানে তাদের একটি অংশ শিক্ষা ছুটিতে গেলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, তারা অনুমতি নিয়েই যাচ্ছে। অনুমতি দিচ্ছে একাডেমিক কাউন্সিল, ডিনস কমিটি। পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলে শূন্যতা তৈরি হওয়ার কথা নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষা ছুটির প্রভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। সে কারণে কত শতাংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে যাচ্ছেন, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেবে দেখা দরকার।