ছুটি নিয়ে পাঁচ লাখ শিক্ষকের অসন্তোষ

রুম্মান তূর্য |

ছুটি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। চলতি বছর সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া হাইস্কুল ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ৭৬ দিন নির্ধারিত ছুটি থাকলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৪ দিন ও মাদরাসায় ৬৩ দিন ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়টিকে বৈষম্য বলছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। অপরদিকে হাইস্কুলের সমান ছুটি মাদরাসাগুলোতে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষকরা।

ছুটি নিয়ে অসন্তুষ্টু শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। 

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছুটি আগের মতোই আছে, নতুন বছরে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কয়েকটি ছুটি হওয়ায় ছুটি কম মনে হচ্ছে। অপরদিকে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রসিদ্ধ মাদরাসাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ছুটির তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে, মাদরাসাগুলোর পক্ষ থেকে ছুটি আরও কম দেয়ার কথা বলা হয়েছিলো। 

সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক ছুটির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে হাইস্কুল ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ৭৬ দিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৪ দিন ও মাদরাসায় ৬৩ দিন ছুটি থাকছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকছে। 

অভিন্ন ছুটি চান প্রাথমিকের শিক্ষকরা : 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখের বেশি শিক্ষক অভিন্ন ছুটির দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি জানিয়েছেন সাবেক শিক্ষকরাও। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বাচ্চারা যেখানে সারা বিশ্বে বেশি ছুটি পান, কিন্তু বাংলাদেশে শিশুদের ছুটিই কম। অপরদিকে ছুটি কম হওয়ায় বাচ্চাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও অখুশি। কারণ কোনো দম্পতির যদি হাইস্কুলে পড়ুয়া ও প্রাথমিকে পড়ুয়া দুইটি সন্তান থাকে, তবে হাইস্কুলের ছুটি থাকলেও প্রাথমিকে পড়ুয়া বাচ্চাটি ছুটি পাচ্ছেন না। তাই ওই পরিবারের বেড়াতে যাওয়া রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, ছুটি দেয়া হয়েছে ৫৪ দিন। কিন্তু বাস্তবে ছুটি পাবো ৫১ দিন। প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটিও আমরা পাই না। কারণ তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমোদন করাতে হয়। আমাদের ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করায় আমরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেলেও ছুটি পাই না। ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করায় আমরা পিআরএলে গেলে অর্ধগড় বেতন পাই। আবার জাতীয় দিবসগুলোতে নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি পেলেও আমরা পাই না। এতে শিক্ষকদের মোট ছুটি অনেক কমে যায়। আমরা চাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমান ও অভিন্ন ছুটির তালিকা।   

এদিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে দৈনিক আমাদের বার্তাকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একই দেশে একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের নিয়ম হতে পারে না। নেতারা অবিলম্বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ছুটির তালিকা সংশোধন করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রণয়নসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের হাতে থাকা সংরক্ষিত ছুটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন ছাড়া প্রধান শিক্ষকের অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। 

জানতে চাইলে ছুটির তালিকা অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে ৫৪ দিন। এ হিসাব শুক্র ও শনিবার ছাড়া। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।  ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বেশ কয়েকটি সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ছুটি কিছুটা কমছে বলে মনে হলেও ছুটি আগের মতোই আছে। 

হাইস্কুলের সমান ছুটি চান মাদরাসা শিক্ষকরা :

ছুটির তালিকা নিয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসেসিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাদরাসাগুলোকে অন্যান্য ধর্মীয় দিবসের ছুটি দেয়া হয়না তা ঠিক। কিন্তু আমাদের বাচ্চারাও ছুটি চায়। মাদরাসায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহার ছুটি মিলিয়ে দেয়া হয়েছে ১০ দিন। আর হাইস্কুলে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে মোট ছুটি ১৯ দিন। আমরা হাইস্কুলের সমান ছুটি চাই। 

তিনি আরও বলেন, এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি যখন দেয়া হয়, তখন আসলে ছুটির প্রয়োজন হয় না। কারণ ঋতু পরিবর্তনের ফলে ফসল তোলার সময় বদলেছে। এতে ফসলের সময় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাওয়া যায় না। তাই ফসল তোলার সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। 

জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসাইন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ধর্মীয় ছুটিতে কিছুটা পার্থক্য থাকায় মাদরাসায় ছুটি কিছুটা কম। তবে, আমরা প্রসিদ্ধ মাদরাসাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ছুটির তালিকা প্রস্তাব করেছিলাম। তখন প্রসিদ্ধ মাদরাসাগুলো আরও কম ছুটি দেয়ার বিষয়ে মতামত দিয়েছিলো। আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছুটা বাড়িয়ে ছুটির তালিকা প্রস্তাব করেছিলাম।   
উল্লেখ্য, সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদরাসায় হিন্দু শিক্ষক রয়েছেন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025529861450195