ছয় বছর বরখাস্ত থাকার পর স্কুলের কর্মচারীর মৃত্যু

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি |

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রায় ছয় বছর বরখাস্ত থাকার পর আনোয়ার হোসেন (৫০) নামের এক অফিস সহকারী মৃত্যুবরণ করেছেন। উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের রুপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের এ অফিস সহকারী দীর্ঘসময় বরখাস্ত থাকা নিয়ে মানসিক হতাশা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানান জটিল অসুখে ভুগছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবারবদুপুরের দিকে পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃতুকালে তিনি দুই সন্তানসহ অসহায় পরিবার রেখে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাতে ব্যাপক সমালোচানা চলছে।

জানা গেছে, অষ্টমনিষা ইউনিয়নের প্রত্যান্ত এলাকাতে রুপসী উচ্চ বিদ্যালয় হয়েছিল ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। প্রতিষ্ঠার সময় রুপসী গ্রামের আহসান প্রাং (বর্তমানে মৃত) তার বড় ছেলে আনোয়ার হোসেনকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী পদে চাকরি দিতে ২৪ শতক জমি দান করেন । এর পর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেনও নিয়মিতভাবে চাকরি করছিলেন। কিন্তু ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. ছাইদুর রহমান নিয়োগ পান। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অফিস সহকারীর তেমন বনি বনা হচ্ছিল না। তার এক পর্যায়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করেন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি অডিট করলে স্কুলে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পরে। মুলত তখন থেকেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক অফিস সহকারীর মধ্যে সম্পর্কের আরও বেশি অবনতি হয়। পরের বছরই স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এরপর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে হয়েছে অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেনকে। আশ্বাসও দিয়েছেন অনেকে, সুবিধাও নিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরে অনোয়ার হোসেনকে চাকরি থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার  উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেনের শরণাপন্ন হন। এমপি অফিস সহকারীর বেতন বহাল রাখার মৌখিক আদেশ দেন। বেতন বহাল রাখতে বাধ্য হলেও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ছাইদুর রহমান অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেনকে নিজ পদে কাজে যোগ দিতে দেননি। বরং অফিস সহকারির অফিস কক্ষ ও আলমারির চাবি বিদ্যালয়ের  সহকারি শিক্ষক আবু সাইদকে দিয়ে তার মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনিই অফিস সহকারির দায়িত্ব পালন করছেন।

অফিস সহকারী অনোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বিদ্যালয়ের নিজ দায়িত্ব পালন করতে না পেয়ে দিন দিন হতাশায় ও মানসিক দুশ্চিন্তায় অফিস সহকারী অনোয়ার হোসেন নানান ধরণের অসুখে ভুগতে থাকেন। অবশেষ গত বৃহস্পতিবার পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থতায় দুই নাবালক সন্তান ও স্ত্রী রেখে তিনি মৃত্যবরণ করেন। আর বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ও প্রধান শিক্ষক মিলে নিয়োগসহ যাবতীয় কাজ স্বাভাবিকভাবেই পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহকারীর ছেলে আকাশ আহম্মেদ কান্না জড়িত কন্ঠে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তার বাবা সব সময়ই বরখাস্ত ও চাকরি, সংসার ও তাদের ভাবিষৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। 

এ বিষয়ে রুপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক আবু সাইদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক অফিস সহকারীর ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। তাই কাগজে কলমে তিন মাস সাময়িক বরখাস্ত দেখালেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। 

ঘটনার বিষয়ে মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. জামাল উদ্দীন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রুপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত করে দায়িত্ব থেকে দূরে রেখে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে রুপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছাইদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কমিটির জটিলতার কারণে অফিস সহকারীর সাময়িক বরখাস্ত দীর্ঘ দিনেও প্রত্যাহার করা যায়নি। তবে তাকে দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হলেও তিনি বেতন নিয়মিতই পেতেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030980110168457