ছয় মাস অফিস না করেও বেতন তুলছেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি |

দেড় মাস ছুটি নিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি ইমেইলে যোগদান পত্র পাঠানোর পর থেকে অফিসে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এস. এম তৌফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে। মাস শেষে অফিসের হাজিরা খাতাও আনা হচ্ছে তার বাসায়। বাসায় বসে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন তুলছেন তিনি। 

তবে ওই কর্মকর্তার দাবি, ‘তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত তাই অফিস করতে পারছেন না। বাসা থেকেই কাজ করছেন।’ কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ি রাজশাহী বিভাগীয় শহরে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইমেইলে যোগদান পত্র পাঠানোর পর মাঝে দুইদিন অফিসে হাজির হলেও বাড়ি বসেই তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজ সারছেন অফিস সহকারীর মাধ্যমে।

দায়িত্ব না দিয়ে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতা, ছুটি ও অফিসের অন্যান্য আর্থিক এবং নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে চরম বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় ডিপিইও তৌফিকুজ্জামান ২০ জানুয়ারিতে দেড় মাসের ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখান থেকে ফিরে তিনি ছুটি শেষ হওয়ার আগেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে অফিসে যোগদান পত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে ২৩ আগস্ট রবিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি অফিসে আসেননি। 

আব্দুল হাকিম নামের অফিস কর্মচারী (অফিস সহকারী) মাস শেষে তার বাড়ি রাজশাহীতে হাজিরা খাতা নিয়ে গেলে বাড়ি বসেই তিনি হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করে নিয়মিত বেতন তুলছেন। একইসঙ্গে আব্দুল হাকিম মারফত অফিসিয়াল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন,‘দীর্ঘদিন থেকে ডিপিইও মহোদয়ের অনুপস্থিতির কারণে সময়মতো সবকিছু করতে পারছি না। অফিসের প্রধান কর্তাই যদি দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন তাহলে কী আর সঠিকভাবে অফিস চলে?’

সরেজমিনে রবিবার (২৩ আগস্ট) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা ভবনে গিয়ে দেখা গেছে,ডিপিইও এসএম তৌফিকুজ্জামানের কক্ষে তালা ঝুলছে। এ সময় দেখা হয় সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি তার কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন, ডিপিইও স্যার দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। এজন্য অফিসে আসেননি। 

ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কেউ দায়িত্ব পালন করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, ডিপিইও স্যারই দায়িত্ব পালন করছেন’। অফিসে না এসে কিভাবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,‘আর্থিক ও জরুরি কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য অফিস সহকারী রাজশাহীতে স্যারের (ডিপিইও) বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসেন’। তার সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসার সময় ডিপিইও’র কক্ষের তালা খোলা পাওয়া যায়।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অফিস সহকারী আব্দুল হাকিম ডিপিইও’র বাড়ি রাজশাহীতে গিয়ে হাজিরা খাতা ও কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে আসার কথা স্বীকার করে বলেন,‘ডিপিইও স্যার অসুস্থ হওয়ার কারণে প্রয়োজনের স্বার্থে আমি এ দায়িত্ব পালন করছি। এতে তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না, বরং অফিসিয়াল কাজে বিড়ম্বনা কমেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম তৌফিকুজ্জামান মোবাইল ফোনে অফিস সহকারী আব্দুল হাকিমের মাধ্যমে নিজ বাড়ি রাজশাহীতে বসে হাজিরা খাতা ও কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার কথা স্বীকার করে বলেন,‘ক্যান্সারে অসুস্থ হওয়ার কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। মাঝে মধ্যে অফিসে আসি’। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন,‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029239654541016