জবিতে অধ্যাপককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক

জবি প্রতিনিধি |

সমন্বিত গুচ্ছ পরীক্ষার পক্ষে মত দেওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে মারধরের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয় দাবি করে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন অনেকে।

শিক্ষকরাই যদি এমন কর্মকাণ্ড করেন তাহলে শিক্ষার্থীদের কি শিখাবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন অনেকে। এবং সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার পিছনে যারা আছে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিও জানান এক শিক্ষক।  

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে মারধরের ঘটনা ঘটে তারই সহকর্মীদের দ্বারা। 

জানা যায়, একাডেমিক কাউন্সিল সভায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেড়িয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার পক্ষে মতামত দেয় এবং গুচ্ছে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে কেন প্রশ্ন তুলে।  

এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, সদস্য  ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর মো. আবুল হোসেন বাক বিতণ্ডা শুরু করে। বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর মো. আবুল হোসেন, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ আকরাম উজ্জামানসহ কয়েকজন মিলে অপর পাশ থেকে উঠে গিয়ে মারধর করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার তাদের শান্ত করতে গিয়েও ব্যার্থ হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, স্বাধীন মতামত দেওয়ার অধিকার সকলেরই আছে। তবে আমি যেহেতু উপস্থিত ছিলাম না সভায় সংবাদ মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি শিক্ষকদের এমন আচরণ কাম্য নয়। শিক্ষকদের জন্য এমন ঘটনা মানানসই না। জাতির কাছে শিক্ষকদের নিয়ে নেগেটিভ বার্তা যায়। এরকম আচার-আচরণ আমাদের বর্জন করা উচিৎ।  

সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ঘটনার বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে গায়েব হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ কিভাবে হারাল এবিষয়টির তদন্ত আগে হওয়া উচিৎ। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার পিছনে যারা আছে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস.এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, একাডেমি কাউন্সিলে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা ওখানেই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল। কারণ অধ্যাপক আব্দুল কাদের ও ঘটনায় সম্পর্কিত অন্যান্যরা সকলেই তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষকদের শিক্ষক সুলভ আচরণ আরও সুন্দর ও পরিমার্জিত হওয়া উচিত।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সেকেন্দার এ ঘটনার বিচার দাবি করে তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, একজন ডিন এবং শিক্ষক সমিতির নেতা আমাদের একজন প্রিয় সহকর্মীর গায়ে হাত তুলেছেন। ঘটনার নিন্দা জানাই এবং উক্ত ডিনসহ অভিযুক্তদের শাস্তি চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করি ডিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবেন। কারণ ডিনের দায়িত্ব শিক্ষকের গায়ে হাত তুলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন বলেন, ঘটনার সময় তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত ছিলাম না। তবে যতটুকই শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। শিক্ষকরা আমাদের অভিভাবক তাদেরকে আরও মার্জিত হওয়া দরকার।

সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য বলেন, হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না।  

হার্ডডিস্ক হারিয়ে গেল কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হার্ডডিস্ক আছে। কিন্তু কম্পিউটারে সাপোর্ট করে, আবার করে না। অনেক আগে থেকেই সমস্যা। এ  সময় সব ফুটেজ আছে কিন্তু শিক্ষক লাঞ্চিতের ওই ২ মিনিটের ফুটেজ কোথায় গেল প্রশ্ন করা হলে আইটি পরিচালক ফোন কেটে দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036280155181885