জবিতে কোথাও নেই প্রতিষ্ঠাতা কিশোরীলালের স্মৃতিচিহ্ন

জবি প্রতিনিধি |

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষুদ্র পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পেছনে রয়েছে শতাব্দীর ইতিহাস। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যাদের হাত ধরে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছিল, তাদের অন্যতম বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। তার বাবা জগন্নাথ রায়ের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও কিশোরীলাল রায়ের কোনো স্মৃতিচিহ্নও রাখা হয়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও সাড়া পাননি কিশোরীলালের বংশধররা।

কিশোরীলালের নাতির ছেলে কালিশঙ্কর রায়। তার স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরী বলেন, দেশের শিক্ষা বিস্তারে নিঃস্বার্থে কিশোরীলাল জমি ও অর্থ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের

সামনে একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে তার স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়েছি। একাধিকবার তার ছবি নিয়েও গিয়েছিলাম উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের দেয়ালে টানানোর জন্য। কিন্তু তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অর্থ সম্পদ চাই না। শুধু সম্মানটুকু চাই। 

জগন্নাথ কলেজের শতবর্ষ পূর্তিতে প্রকাশিত স্মরণিকার তথ্যমতে, ১৮৬৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী বাবার নামে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় জগন্নাথ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৪ সালে এটি কলেজে রূপান্তরিত হয়। পরে কিশোরীলাল ১৯০৭ সালের ১ মার্চ একটি ট্রাস্টবোর্ড গঠন করে কলেজের নামে জমি দেন। ওই বোর্ডের তিন সদস্যের মধ্যে একজন ছিলেন কিশোরীলাল। দুই বছর পর ১৯০৯ সালের ৩ জুন কিশোরীলাল মারা গেলে আগস্টে নতুন ট্রাস্ট দলিল গঠন হয়। এরপর থেকেই পুরোপুরিভাবে জমি প্রতিষ্ঠানটির হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০০৫ সালে আইন পাসের মাধ্যমে কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রূপ পায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৭টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত।

জানা গেছে, কিশোরীলালের বংশের পরবর্তী সদস্যরা বংশানুক্রমে মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার প্রাসাদে বসবাস করলেও দেশ স্বাধীনের পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এটি সংরক্ষণ করছে। তখন কালিশঙ্কর রায় তার স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে রায়ের বাজার স্কুলের পেছনে একটি বাসায় থাকেন তারা। তার দুই ভাই ও এক বোন থাকলেও তারা বহু বছর আগে ভারতে পাড়ি জমান এবং সেখানেই পরলোকগমন করেন। তাদের তিন ভাইয়ের কারও ছেলে সন্তান না থাকায় কালিশঙ্কর রায় কিশোরীলালের সর্বশেষ বংশধর হিসেবে স্বীকৃত।

কালিশঙ্করের একমাত্র মেয়ে ডেফোডিল রায়ের স্বামী বিপ্লব সাহা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (অস্থায়ী) হিসেবে কাজ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে। জামাতার চাকরি স্থায়ী করার জন্য কালিশঙ্কর রায় ও তার স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরী ঘুরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) বারান্দায়। তবু কোনো সাড়া পাননি তারা। বিপ্লব সাহা বলেন, চাকরিটা স্থায়ী করার জন্য দীর্ঘদিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবেদন রাখবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং জবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, যার অবদানে আজ এত সুন্দর পরিবেশে আমরা পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছি। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমার দাবি থাকবে, তারা যেন শিগগিরই কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম বলেন, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন স্থাপন করা হয়, তখন নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তবু যারা নিজেদের জায়গা ও অর্থ খরচ করে শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তারে অবদান রাখেন, তাদের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা। কিন্তু দেখা যায় আমরা তাদের জন্ম-মৃত্যুর দিনেও স্মরণ করতে পারি না। আজকের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে কিশোরীলাল রায়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে; কিন্তু তাকে স্মরণে রাখার মতো কোনো স্থাপনা নেই এখানে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা অকৃতজ্ঞও বটে, তাদের মনে রাখিনি।

উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক বলেন, এটা তো এক থেকে দেড়শ বছর আগের কথা। আমি তো একা চাইলেই এটা করতে পারব না, সিন্ডিকেটে পাস করতে হবে। আর কিছু করলেও তো ভালোভাবে করতে হবে, এজন্য সময়ের প্রয়োজন। কালিশঙ্করের জামাতা বিপ্লব সাহার চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এতদিন নিয়োগ দেওয়ার মতো কোনো পদ খালি ছিল না। এখন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006309986114502