জবিতে যোগদানের ৮ দিনেই ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী নাসির উদ্দিন। ৪ বছর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন তাকে অর্থ পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ শিক্ষক হিসাব দপ্তরের পরিচালক পদে যোগদানের প্রথম ৮ দিনে নিয়মিত কাজের অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বাজেট তৈরিতে শ্রম দেয়ার জন্য সম্মানী বাবদ তিনি এই অর্থ নেন। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মানী নেয়ার নিয়ম হচ্ছে- নিয়মিত কাজের বাইরে একবছর ধরে অতিরিক্তভাবে কোনো শ্রমসাধ্য কাজ করলে সম্মানী নেয়া যাবে। তবে ৫ম গ্রেডের উপরের কোনো কর্মকর্তা ১০ হাজারের বেশি সম্মানী নিতে পারবেন না। এছাড়া এ সম্মানী নিতে হলে কাজের পূর্বেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

 

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে প্রথম ৮ দিন বাজেট তৈরির অতিরিক্ত কাজ দেখান নাসির উদ্দিন। যদিও তার যোগদানের আগেই বাজেট তৈরি হয়ে যায়। তবে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের প্রধানের ক্ষমতাবলে বাজেট তৈরিতে যারা পরিশ্রম করেছেন, তাদের সঙ্গে সম্মানী বাবদ ৫৪ হাজার ৮০ টাকা নিজ ব্যাংক একাউন্টে ( হিসাব নম্বর ৩৪০২৪৭৮৮) নেন কাজী নাসির উদ্দিন। যোগদানের সময় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ৪র্থ গ্রেডে বেতন পেতেন নাসির উদ্দিন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুসারে, ১ম থেকে ৪র্থ গ্রেডের কেউ অতিরিক্ত সম্মানী নিতে পারবেন না। তবে বাজেটের অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে বছরে একবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী পেতে পারবেন। মন্ত্রণালয়ের এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সম্মানী নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন এবং তা ১০ হাজারের চেয়ে ৫ গুণেরও বেশি। এদিকে এ শিক্ষকের অর্থ পরিচালক পদের মেয়াদ দেড় বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদের প্রিয়পাত্র হওয়ায় এখনো তিনি বহাল আছেন ওই পদে। ট্রেজারারের বাজেট করার কথা থাকলেও তা করে দেন অর্থ পরিচালক নাসির উদ্দিন।

এদিকে ওই বাজেট তৈরিতে আরো অনেকে সম্মানী নিয়েছেন। এর মধ্যে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ৭৮ হাজার টাকা, অর্থ দপ্তরের উপ-পরিচালক (ফান্ড এন্ড বাজেট) খন্দকার হাবিবুর রহমান ৬০ হাজার ৮৪০ টাকা, উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া ৫১ হাজার ৪০০ টাকা, সহকারী পরিচালক সঞ্জয় কুমার পাল ৩৩ হাজার ৫৮০ টাকা, সহকারী পরিচালক তরিকুল ইসলাম ৩৩ হাজার ৫৮০ টাকা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ইসরাফীল ২৫ হাজার ৪৮০ টাকা সম্মানী বাবদ নেন।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই পরিপত্রে সম্মানী নেয়ার বিষয়ে বলা আছে, ৫ম থেকে ৯ম গ্রেড পর্যায়ের কর্মচারীকে মূল বেতনের অনধিক ৩০ শতাংশ, ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডে কর্মরত কর্মচারীকে অনধিক ৩৫ শতাংশ এবং ১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীকে অনধিক ৪০ শতাংশ সম্মানী প্রদান করা যাবে। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য মীজানুর রহমান ১ম গ্রেডে বেতন পেতেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসারে ১০ হাজারের বেশি সম্মানী নিতে পারবেন না তিনি। তাই নিয়ম অনুসারে ৬৮ হাজার টাকা বেশি নেন ড. মীজান।

একইভাবে উপপরিচালক পদে নিয়োজিত খন্দকার হাবিবুর রহমান ১৮ হাজার ২৫২ টাকা সম্মানী পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ৪২ হাজার ৫৮৮ টাকা বেশি নেন। অন্যদিকে ৫ম গ্রেডের মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া ৩৫ হাজার ৯৮০ টাকা বেশি সম্মানী নেন। এছাড়া ৭ম গ্রেড পাওয়া দুই সহকারী পরিচালক সঞ্জয় কুমার পাল ও তরিকুল ইসলাম বেতনের ৩০ শতাংশ সম্মানী হিসেবে ১০ হাজার ৭৪ টাকা সম্মানী পাওয়ার কথা। তবে দুজনেই ২৩ হাজার ৫০৬ টাকা বেশি সম্মানী নেন। অন্যদিকে তৎকালীন ৯ম গ্রেডে চাকরি করা মো. ইসরাফীল ৭ হাজার ৬৪৪ টাকার স্থলে ১৭ হাজার ৮৩৬ টাকা বেশি সম্মানী নেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। রেজিস্ট্রারের কাছে শুনো।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মেনে চলা উচিত। তারা কোনো কাজ দেখিয়ে কত সম্মানী নেয় তারও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত। এছাড়া বর্তমান অর্থ পরিচালকের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। নানা সময় গণমাধ্যমে পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য আমরা পেয়েছি। তার স্থলে অন্য কাউকে নিয়োগ দেয়ার জন্য বার বার আমরা উপাচার্য মহোদয়কে বলেছি।

সূত্র : ভোরের কাগজ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039138793945312