জবির নতুন ক্যাম্পাস : ১০ বার সময় বাড়িয়েও কাজের সমাপ্তি নিয়ে সংশয়

জবি প্রতিনিধি |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন না হওয়ায় কাজ স্থবির হয়ে আছে। লেক নির্মাণের টেন্ডার হলেও কাজ শুরুর অনুমোদন দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে মন্থর গতিতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও একনেক অনুমোদিত প্রকল্পের ডিপিপিতে নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনের ফাইল ঘুরছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা দপ্তরে। সর্বশেষ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুনে তৃতীয় মেয়াদে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়ানোর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন কোনো কাজের অনুমোদন দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে স্থবির হয়ে আছে পুরো নির্মাণকাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের দেওয়ালের কাজ চলছে মন্থর গতিতে। ২০০ একরের দেওয়াল নির্মাণে কাজ করছেন পাঁচ-সাত জন শ্রমিক। লেক নির্মাণের জন্য আনা এক্সকাভেটর মেশিন সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে। কাজ শুরু হলেও উপাচার্যের নির্দেশে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (মাস্টারপ্ল্যান) নিয়োগে ৫ কোটি টাকার কম মূল্যের হলে প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক অনুমোদনের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া একনেক অনুমোদিত নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপিতে মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনের ভার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ওপর ন্যস্ত। এর পরেও মন্ত্রণালয় কর্তৃক মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনের অজুহাতে কাজের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু টাকা হাতে পাওয়ার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণভাবে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজও সমাপ্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৮৮.৬০ একর জমি। অধিগ্রহণ করতে এখনো বাকি ১১.৪০ একর জমি। ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ কাগজে কলমে ৩০ শতাংশ শেষ করেছে দেওয়াল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে গত বছরের ৮ জুন লেক নির্মাণের কাজ পায় ইউআই ও এডিএল প্রতিষ্ঠান। এর সাত দিন পর ১৫ জুন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও লেক নির্মাণের কাজ শুরু করার অনুমতি পায়নি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প তদারকির সঙ্গে জড়িত এক প্রকৌশলী বলেন, ‘উপাচার্যের কারণেই আমরা কোনো কাজ আগাতে পারি না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি সময়ক্ষেপণ করছেন। মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনের ভার ওনার হাতে থাকলেও উনি একাধিকবার ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে সেটা পাশ করান। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে পার করেছেন চার মাস। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে মৌখিক অনুমোদন নিলেও এখন তিনি বিভিন্ন ফাইল চালাচালি করে সময় পার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এই কাজের মেয়াদ আরো ১০ বার বাড়ালেও শেষ হবে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আইনুল ইসলাম বলেন, তারা ইতিমধ্যে নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে এসেছেন। সেখানে দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। উপাচার্যকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। এছাড়া দেওয়াল নির্মাণের কাজ কিছুটা হয়েছে। অন্য কাজ হয়নি। লেক নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভিসি চাইছেন মন্ত্রণালয় থেকে মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করাতে, সেটা হলেই বাকি কাজ শুরু হবে। তবে এই কাজ শুষ্ক মৌসুমে না করলে সামনে বর্ষার সময় কাজ বন্ধ রাখতে হবে। মাটির কাজ বর্ষায় করা যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল অনুমোদন হয়ে গেলে কাজ আর বন্ধ থাকবে না। তবে কাজ অনুমোদনের ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থেকেও মন্ত্রণালয়ে কেন যাওয়া হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপাচার্য এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তিনি হয়তো ঝুঁকি নিতে চান না। সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের দপ্তরে তিন কার্যদিবসে দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সময় দেননি। মোবাইল ফোনে যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031859874725342