জবি আইনে নিষিদ্ধ হলেও রাজনীতিতে শিক্ষকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী এর উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর নিয়ম নেই। তবে এ নিয়ম ভঙ্গ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকসহ অন্যরা সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। রোববার (২০ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন লতিফুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান নিজেই যুবলীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটিরও সদস্য। আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে অংশ নেন। তখন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৪ নম্বর ধারার চার নম্বর উপধারায় উল্লেখ আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। এ আইন লঙ্ঘন করেই উপাচার্য মীজানুর রহমান রাজনৈতিক পদ ধরে রেখেছেন।

এ ছাড়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুল কবির রাহাত লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) সংসদীয় আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও উত্তোলন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক প্রিয়ব্রত পাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির সদস্য, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের রাজনীতিতে জড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে এটার কোনো কার্যকারিতা নেই। এ নিয়ে তাদের কাছে এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগও আসেনি।

উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, 'আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি না। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী না। আমি এখানকার নিয়োগকর্তা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে রাজনীতি করার নিয়ম আছে। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রাজনীতিতে জড়িত, তাদের সঙ্গে কথা বলেন।'

এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ  থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আইন দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপাচার্যের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক : একটি বেসরকারি টেলিভিশনে উপাচার্য মীজানুর রহমান যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদও ছেড়ে দিতে রাজি। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে কোটি কোটি তরুণ বিভ্রান্ত হয়েছেন। এই সংগঠনের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। এখন সংগঠনটি একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোটি তরুণকে ফের সঠিক পথে ফেরাতে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি তা পালন করবেন। এ সময় তিনি বলেন, উপাচার্য হিসেবে তিনি প্রায় ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। যুবলীগ তার প্রাণের সংগঠন। তিনি অবশ্যই যুবলীগের পদকে গুরুত্ব দেবেন।

উপাচার্যের এ বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা উপাচার্যের এ মন্তব্যকে স্বাগত জানালেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একে নেতিবাচকভাবে দেখছেন।

উপাচার্যের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শিল্পী রানী সাহা। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানের ছবি শেয়ার করে লিখেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উচ্চ রাজনৈতিক দূরদর্শিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, মেধাবী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব অর্পণ করছেন। তাই রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে আসন্ন যুবলীগ সম্মেলনেও তিনি ত্যাগী, এক-এগারোর সময়ের উত্তাল রাজপথের অকুতোভয় রাজনৈতিক নেতা, উচ্চশিক্ষিত, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও একাডেমিশিয়ান হিসেবে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত, স্বদেশ ও জননেত্রীর প্রতি সর্বোচ্চ অনুগত রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে দলটির বিশেষ সময়ের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবেন এই প্রত্যাশা করছি।'

তবে আনিসুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, 'বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। একটি পাবলিক ভার্সিটির ভিসি দলীয় পথ চান। এদেশে রাজনৈতিক সংগঠনকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে ছাত্র সংসদ কেন্দ্রীয় ছাত্ররাজনীতি চালু করা উচিত। আর প্রতিটি সরকারি চাকুরেদের রাজনৈতিক সংগঠন করা বন্ধ করতে হবে। কারণ, তারা জনগণের চাকরি করে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেন। অবশ্যই এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হবে।'

মিজানুর মাহি লিখেছেন, একজন স্বনামধন্য শিক্ষক যদি ঘোষণা দিয়ে শিক্ষাঙ্গন ছাড়তে চান, তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এলার্মিং।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027120113372803