জবি ছাত্রলীগের শীর্ষপদ পেতে লবিং

জবি প্রতিনিধি |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে শীর্ষপদ পেলেই নেতারা রাতারাতি কোটিপটি হয়ে যান। পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকার এ ক্যাম্পাসের অবস্থান হওয়ায় তারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে অর্থের পাহাড় গড়ে তোলেন।

তারা ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, লেগুনা স্ট্যান্ড, বিভিন্ন খাবারের দোকান, রেঁস্তোরা, ফুটপাত, শো-রুম, ফটোকপি দোকান মালিক সমিতি, হাসপাতাল, কুরিয়ার সার্ভিস, কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির থেকে নিয়মিত ও মাসিক চাঁদা আদায় করেন।  আহসান জোবায়ের  

এসব জায়গা থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন জবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এছাড়া বিশ্বদ্যালয়ের ছোট বড় সকল ধরনের টেন্ডার বাগিয়ে নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ২ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান থাকায় ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে শীর্ষপদে আনতে সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাপ বেড়েছে। সিন্ডিকেটের নেতাকর্মীরা তাদের অনুসারীদের শীর্ষ পদে আনতে লবিং তদবির করে যাচ্ছেন। আগামী ২০ জুলাই ছাত্রলীগের সম্মেলনে শীর্ষপদে নেতাকর্মীদের আনতে সজাগ রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল পদ পাওয়ার আগে মেসের সিট ভাড়া দেওয়া সামর্থ্য ছিল না। এমনকি শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল ধোলাইখাল হোসেন মিয়ার বাড়িতে বিনাভাড়ায় দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলেন।

অন্যদিকে তরিকুল ইসলাম ছাত্রলীগের এক সহ-সম্পাদকের সঙ্গে বেড শেয়ার করে থাকতেন। কিন্তু কমিটিতে পদ পাওয়ার পর তারা চাঁদাবাজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। এছাড়া তরিকুল ও রাসেলের পূর্বের কমিটির সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘ চার বছর একইভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেম ঘটিত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু আবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়ালে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনার বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলার তিন নম্বর আসামি আশরাফুল ইসলাম টিটনকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন প্রস্তুতির কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের পদপ্রত্যাশীরাও স্থান পেয়েছেন। আছেন বিভিন্ন সময়ের বিতর্কিতরাও। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমীন শেখ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলমের অনুসারী।

জবি ছাত্রলীগের সাবেক এ সহ-সভাপতি শীর্ষ পদ বাগে আনতে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফরাজী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। শীর্ষপদে আনতে এ ছাত্রনেতার পেছনে অনেক টাকা বিনিয়োগ ও লবিং করে যাচ্ছেন যুবলীগের এ নেতা।

জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল ও গাজী আবু সাঈদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাকিল। শাখা ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের সংঘর্ষে শাকিলের হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ছবিও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

জবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিসাদ বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে চাঁদাবাজির ও মারামারির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত শিকদারের অনুসারী। জামাল হোসেনকে শীর্ষপদে আনতে তারা দুজনই আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

শাখা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ পারভেজ আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জবি ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শাহবাজ হোসাইন বর্ষণ রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও শরিয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর ভাগ্নে পরিচয়ে গত কমিটিতে সিন্ডিকেটের জোরে গুরুত্বপূর্ণ এ পদ পেয়ে যান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025148391723633