দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে তুচ্ছ ঘটনা সাজিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাসের হেলপার-ড্রাইভারকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তাদের ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় অতিষ্ঠ সদরঘাটগামী পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
জানা যায়, একটি চক্র সদরঘাটগামী বাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া না নেওয়ার ইস্যু সাজিয়ে প্রথমে বাসের হেলপারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায়। বাসটি সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্ক বা এর আশপাশের এলাকায় পৌঁছালে আরও কয়েকজন গাড়িতে ওঠে। সবাই মিলে ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিহঙ্গ পরিবহন এবং সাভার পরিবহনের ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে চক্রের সদস্যরা।
এ বিষয়ে বিহঙ্গ পরিবহনের ড্রাইভার ইসরাফিল বলেন, গত বৃহস্পতিবার মৎস্যভবনের মোড় থেকে এক যাত্রী গাড়িতে ওঠে। গাড়ি রায় সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছালে ওই যাত্রী নিজেকে ছাত্র দাবি করে হেলপারের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করে। গাড়ি বাহাদুরশাহ পার্কের সামনে তেলের পাম্পে পৌঁছানোর পর কিছু যাত্রী নামে। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ছেলে গাড়িতে ওঠে। তারা ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করা জবির শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া ওই যাত্রীর সঙ্গে মিলে হেলপার ও আমাকে মারধর করে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাদের জবির পাশের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় মামলা করতে হলে কোতোয়ালি থানায় যেতে হবে। এরপর তারা আমাদের জবির সামনে নিয়ে যায়। আমাদের কাছে থাকা টাকা কেড়ে নিয়ে ফের মারধর করে। ওই চার-পাঁচজনের মধ্যে মেহেদী নামে একজনকে আমি চিনতে পারি।
শুক্রবার দুপুরে সাভার পরিবহের ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৫৭৯৬ সিরিয়ালের গাড়ির সারা দিনের টাকা ছিনতাই করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া কয়েকজন। সাভার পরিবহনের শ্রমিক মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই পাঁচ-ছয়টি গাড়ির ভাড়ার টাকা তারা নিয়ে যায়। গত ১৫ দিনে ভিক্টর, বিহঙ্গ, সাভার, আজমেরী পরিবহনের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি গাড়ির সারা দিনের টিপের টাকা নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে। এ ছাড়া ড্রাইভার-হেলপারদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চক্রটির নেতৃত্ব দেন জবির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (১২তম ব্যাচ) দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪তম ব্যাচ) সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক সরকার সাম্য।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মিরপুর-সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৮৯৩৭ নম্বর বাসটি সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলগ্ন তেলের পাম্পে থামলে মেহেদী ও সাম্যসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বাসে ওঠে। তারা নিজেদের জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দাবি করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া কেন নেওয়া হয়নি জানতে চেয়ে হেলপার ও ড্রাইভারকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের জবি গেটে নিয়ে আসে। এরপর তারা হেলপারের পকেটে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই এসব ঘটছে। ভুক্তভোগীরা জানান, রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এসব ঘটনা ঘটছে। জানতে চাইলে মেহেদী বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। যদি এ বিষয়ে নিউজ করতে চাও, তাহলে প্রমাণ নিয়ে তারপর করবে।
জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে একাধিকবার বলেছি, কেউ যদি জবির শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জবির প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আসে, তখন আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা এনামুল হক সবুজ। তিনি বলেন, গণপরিবহনে টাকা ছিনতাই ও ড্রাইভার-হেলপারের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এ বিষয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ওসি মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, পরিবহনে ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করে আমরা ব্যবস্থা নেব।