জবি শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় অডিও ফাঁস

জবি প্রতিনিধি |

‘আন্দোলন করবেন ভালো কথা তাই বলে রেজুলেশনটাও উপাচার্যকে লিখতে দেবেন না নিজেরা লিখে এনে বলবেন সাইন দেন এরা কোন পক্ষের শক্তি? নূরে আলম আব্দুল্লাহ ভাইয়ের একটা কথা ভালো লেগেছে, সে বলেছে ওকে কেনো মারছেন। আবার কিছু কিছু ম্যাডাম দেখলাম দূর থেকে বলছে যে আরো মারেন আরো মারেন।’

সমন্বিত গুচ্ছ পরীক্ষার পক্ষে মত দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে মারধরের ঘটনায় অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুজ্জামানের সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক আব্দুল কাদেরের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপে এমন কথা বলতে শোনা যায় ভুক্তভোগী অধ্যাপককে। দুই অধ্যাপকের কথোপকথনের তিনটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ফাঁস হওয়া ১৭ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এক ক্লিপের কিছু অংশের কথোপকথনে অধ্যাপক শফিকুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই কি আমার ভাই না ভাই না ক তো? তুই কিন্তু আমার গালের মধ্যে চড় দিতাছস।’ 

কথোপকথনের এক পর্যায়ে অধ্যাপক কাদের বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষকদের গায়ে হাত দিতে পারে এটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। তাও এরকম সিনিয়র শিক্ষকরা। যেটা লেকচারার আর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হলে একটা কথা ছিলো। মিটিংয়ে টেবিল চাপড়ানো এটা খুব স্বাভাবিক। 

উত্তরে অধ্যাপক শফিক বলেন, জিনিসটা সমাধান হয়ে গেছে এরপর এটা নিয়ে গুতাগুতির কি।

আব্দুল কাদের বলেন, আমাকে প্রশ্ন করলে তো আমি উত্তর দেবো। আমাকে নাম ধরে প্রশ্ন করেছে যে একাডেমিক কমিটিতে আমি কোনো ডিসিশন দেয়নি কেনো? তো সেটার উত্তরটা শুনবে না? সে যদি নাম না ধরে বলতো তাহলে কথা ছিলো। এখন উনি আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছে, সেই উত্তরটা আমি দিতে চেয়েছি। তখন যদি সবাই হই হই করে তখন তো আমি বলবো তাহল তো এই মিটিং হবে না। এই মিটিংয়ের তো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাকে বলতে দিলেই তো হয়ে যায়। একজনের কথায় তো আর গুচ্ছে থেকে যাবে না। তাইলে এভাবে কি কোনো মিটিং হয় এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে না, উপাচার্য থাকবে না, ইউজিসি থাকবে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থাকবে না, দুই দিন পরে বলবে প্রধানমন্ত্রী মানি না। বিএনপি কি এখনই ক্ষমতায় চলে আসছে নাকি? এতো উত্তেজনা কেনো?

অধ্যাপক কাদেরকে আরো বলতে শোনা যায়, আন্দোলন করবেন ভালো কথা তাই বলে রেজুলেশনটাও উপাচার্যকে লিখতে দেবেন না নিজেরা লিখে এনে বলবেন সাইন দেন এরা কোন পক্ষের শক্তি? একপর্যায়ে তিনি বলেন নূরে আলম আব্দুল্লাহ ভাইয়ের একটা কথা ভালো লেগেছে, সে বলেছে ওকে কেনো মারছেন। আবার কিছু কিছু ম্যাডাম দেখলাম দূর থেকে বলছে যে আরো মারেন আরো মারেন। মিটিংয়ের যে অবস্থা দেখলাম তাতে মনে হলো বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। রইছ উদ্দীন বক্তব্য দিচ্ছে আর সবাই মনোযোগসহকারে শুনছে। এমন অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন দিন ছিলোই না। 

অপর ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায়, অধ্যাপক শফিক বলেন, একটা কথা কই, তুই কিন্তু আমার ভাই। মারস, কাটস, গালিগালাজ করস তুই আমার ভাই। তোর আল্লাহর দোহাই লাগি কোন অবস্থায় জিনিসটারে আর সামনে না আগাই।

উত্তরে আব্দুল কাদির বলেন, আমি ঠেকাবো কিভাবে, আমার কি করতে হবে বলেন? 

অধ্যাপক শফিক, কি করতে হবে মানে, আবুলকে ধরে নিয়ে আসবো, আবুল তো যতো বাড়া বাড়ছে, সে আবুল আজকে তো বাড়ে নেই। তোর তো বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে। আমার নমিনেশনটা কনফার্ম না কইরা তরা এই দরবারটা লাগাইছস। নেতা তো তোরা তৈরি করছোস। যেভাবে হোক কালকে বসি বা পরশু বসি তোর বাসায়। আবুল লুৎফরকে নিয়ে আরো যারা যারা আসা লাগবে তাদের নিয়া। জিনিসটা কিন্তু আবুল একবার মাফ চাইছে ওখানে, আবার মাফ চাইবে, আমি মাফ চাই। গ্রুপে আর ঝামেলাটা বাধাইস না। ভাই আল্লাহর দোহাই জাকারিয়ারে আর সুযোগ দিস না, ঐ গ্রুপটারে আর সুযোগ দিস না।.... কথা বুঝস কি বুঝস নাই?

জবাবে অধ্যাপক কাদের বলেন, বুজছি ভাই।

অধ্যাপক শফিক বলেন, তুই আমার ভাই।...তুই কি আমার ভাই, না ভাই না?

অধ্যাপক কাদের: ভাই তো বটেই।

অধ্যাপক শফিক: তুই তোর অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন কর। যা অ্যাসাইনমেন্ট আছে সেগুলো বাস্তবায়ন কর।

অধ্যাপক কাদের: আমার কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নাই।

অধ্যাপক শফিক: তোর আল্লার দোহাই জিনিসটা নিয়া যেন আর বাড়াবাড়ি না হয়। তোর আল্লাহর দোহাই। গতকাল কিন্তু তুই আমারে কিল খাওয়াইছস, কিল কিন্তু আমি খাইছি এটা কাউরে আমি বলতে পারি নাই।

অধ্যাপক কাদের: এখন আমার করণীয় কি?

অধ্যাপক শফিক,: করণীয় হলো তুই এখন মুখটা বন্ধ রাখবি, আমি আবুল হোসেনকে বলি তরে ফোন দেয়ার জন্য, লুৎফরকে বলি তরে আবার ফোন দেয়ার জন্য। এদের নিয়া ইফতারের পর তোর বাসায় আসি। কোন জায়গায় আমু তুই জায়গা আর টাইম ঠিক করে আমাকে জানা।

অধ্যাপক কাদের: আজকে তো সম্ভব না, এখন আমি ক্লাসে যাচ্ছি।

অধ্যাপক শফিক: ক্লাস থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন দে।

অপর ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ক্লিপের কথোপকথনে অধ্যাপক শফিককে বলতে শোনা যায় আমি কি ফিরাইতে গিয়া ভুল করলাম?

অধ্যাপক কাদের: কেনো?

অধ্যাপক শফিক: আমাকে অভিযুক্ত বানাইয়া, মানুষ ফোন টোন দিয়া, তোরে মারতে মারতে আমি রাখি নাই। এটা কোনো কথা হইলো?

অধ্যাপক কাদের: এখন কি বলবো বলেন।

অধ্যাপক শফিক: আবুল, লুৎফরা তোর সামনে গেলে আমি কি বসে থাকবো? আমি তোর সামনে গিয়া দাঁড়াবোনা?

অধ্যাপক কাদের: পত্রিকায় তো অনেক নানারকম রিপোর্ট আসে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে আমি কিন্তু কারো নামই বলি নাই।

অধ্যাপক শফিক: কেউ বললে তুই নাম বলবি না কেন অবশ্যই বলবি।

অধ্যাপক কাদের: সেটা তো আমার মনে নাই।

অধ্যাপক শফিক: আব্দুল্লাহ ভাই আমি, ফিরাইছি কিন্তু আমরা দুইজনই। আর কেউ ফেরায়নি।

অধ্যাপক কাদের: সেটা এখন বলবো, অসুবিধা না।

অধ্যাপক শফিক: ফেরানো যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে পানিশমেন্ট পাবো অসুবিধা নাই।

অধ্যাপক কাদের: না না কেনো পানিশমেন্ট হবে।

অধ্যাপক শফিক: অভিযুক্ত দিলে তো বেডা কাঠগড়ায় দাঁড়াই গেছিগা না?

অধ্যাপক কাদের: সেটা পত্রিকায় তো আসেই।

অধ্যাপক শফিক: আমিতো প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে কারণ লুৎফর ভাই, আবুল ভাই, জাকির স্যার, এরপর হইলো জামাল, আলিম ভাই এরা একটা কোর টিম আসছে। আমি প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে পরে ত দেখি ঘটনা অন্যরকম। এরপর আমি দৌড় দিয়া গেছি আমি দৌঁড়ে যাওয়ার পর তো কিছু হয় নাই। এরপর আমি বলছি একটা কিচ্ছু করতে পারবেন না। সরেন এখান থেকে সবাই। এরপরই তো সরে গেছে সবাই।

অধ্যাপক কাদের: হুম

অধ্যাপক শফিক: এখন তো অভিযুক্তের কাতারে আমাকে মেরে দিছিস।

অধ্যাপক কাদের: না না।

অধ্যাপক শফিক: ঠিক আছে রে...

পরিশেষে অধ্যাপক শফিক অধ্যাপক কাদেরকে বলেন, তুই ঘুমা তোর কাছে রিকয়েস্ট। শরীর ভারি ভারি হয়ে গেছে তোর।

ফাঁস অডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক কাদের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ত কোনো অডিও ক্লিপ কাউকে দেইনি। আমি জানিও না। আর আমার আইফোনে কল রেকর্ডও হয় না। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কাদের তো আমার ছোট ভাই, আমি ওর সঙ্গে কথা বলতেই পারি। 

এর আগে গত ৬ এপ্রিল উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদেরকে মারধরের ঘটনা ঘটে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002586841583252