জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ও বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি

ড. মোঃ মিজানুর রহমান |

আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। এদেশে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান শিক্ষা  ও বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি (ল্যাব) এদেশে আবির্ভাব প্রায় ৬৬ বছর।  প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এর সাথে সংযুক্ত হয়ে এ দিবসটি উদযাপন করছে। দেশের গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের জন্য দিবসটি প্রাণের স্পন্দন ও আবেগের। সারাদেশের গ্রন্থাগার পেশাজীবীরা তাদের নির্ধারিত এ দিবসটির জন্য দেশ স্বাধীনের পরও প্রায় ৪৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে । সাধুবাদ জানাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে।

সময়ের প্রবাহমানতায় ৫ ফেব্রুয়ারি তথা জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস আমাদের মাঝে উপনীত। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দিবসটির প্রবর্তন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ দিবসের প্রবাহ গ্রন্থগার, গ্রন্থাগারিকতা ও গ্রন্থাগার অঙ্গনের সংশ্লিষ্টদের মাঝে এক নব জাগরণের সৃষ্টি করেছে। এ নবজাগরণকে ধারণ করে গ্রন্থাগারসেবীগণ তাদের কাজের মাত্রা ও মান দুটোই আরো জোরদার করতে অধিকতর নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

প্রতিবছর জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি  প্রতিপাদ্য  ঘোষণা করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'সুবর্ণজয়ন্তী অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার'। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে উক্ত প্রতিপাদ্য। গ্রন্থাগার এবং আলোকিত মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে প্রতিপাদ্য অনন্য ভূমিকা পালন করবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ হতে হলে তাকে গ্রন্থগারে যেতে হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষা সিলেবাস নির্ভর, গ্রন্থাগারের শিক্ষা সীমাহীন। সেখানে পাঠক তার ইচ্ছামত বই অথবা গ্রন্থাগারে রক্ষিত অন্য যে কোন পাঠ্য সামগ্রী আপন সন্তুষ্টি অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। 

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির জন্য এটা পঞ্চমবারের জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস- ২০২২ উদযাপন করতে যাচ্ছে । অন্যান্য সময় জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপনের ক্ষেত্র এবছর গ্রন্থাগার দিবস উদযাপনে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের জন্য একটি ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এদেশের গ্রন্থাগার পেশাজীবীগণ দীর্ঘদিন তাদের শিক্ষকদের পদমর্যাদা, বেতন স্কেল এবং টিচিং স্টাফ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে মার্চ এ দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নিয়োজিত পেশাজীবীরা তাদের শিক্ষকদের পদমর্যাদা, পদবী ও টিচিং স্টাফের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপনে অন্যান্য আনন্দের সাথে এই আনন্দটা একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করছে।

একটি সুন্দর আলোকিত সমাজ গঠনে গ্রন্থাগার বিশেষ করে গণগ্রন্থাগার ও স্কুল গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। মানব সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ এবং এর ধারাবাহিকতায় অমূল্য তথ্যাবলী পুস্তকে গ্রন্থিত থাকে। গ্রন্থাগার সেই পুস্তকের বিশাল সংগ্রহকে ধারণ করে এবং তার সহজ ব্যবহারে সকলকে সুযোগ করে দেয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের অবাধ  প্রবেশাধিকার থাকায় সকলের অংশগ্রহণে এ ধরনের গ্রন্থাগার আলোকিত মানুষ হওয়ার মিলনক্ষেত্র পরিণত হয়। আর এই আলোকিত মানুষ গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রন্থাগার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। 

বঙ্গবন্ধু আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য এদেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকে অর্থাৎ প্রাথমিকস্তর থেকে গ্রন্থাগারভিত্তিক পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তারা তাদের শিক্ষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে।পাশাপাশি গ্রন্থাগার ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজ থেকে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক এর ব্যবহার বন্ধ হবে। আর এটা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শোক দিবসের পালনের প্রাক্কালে ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায়  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক-কে প্রধান অতিথি করে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে সুপারিশ মোতাবেক এদেশের প্রাথমিকস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য প্রাথমিকস্তরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার) পদ সৃজন  করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করছে; যা অচিরেই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যায়। 

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জ্ঞানার্জন, গবেষণা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশে সংস্কৃতির চর্চা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের জনসমষ্টিকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেশাজীবীদের মহাসম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তার স্বাক্ষর রেখেছেন। পাশাপাশি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর, বেসরকারি পর্যায়ের ১০০০ গণগ্রন্থাগার এবং সরকারি সব গণগ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৃথক গ্রন্থাগার না থাকলেও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপরে কিছু পুস্তক সংরক্ষণ করে একটি কর্নার স্থাপনের সরকারি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমের সঙ্গে প্রথম থেকে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। আমরা বিশ্বাস করি এদেশের গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিকতা পেশার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির অবদান জাতি মনে রাখবে। পাশাপাশি গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা, ব্যবহার এবং উপকারিতা এদেশের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-১০২২ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২২ সফল হোক। 

জয় হোক বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির।

লেখক: ড. মোঃ মিজানুর রহমান, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023801326751709