করোনায় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে হারালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আর নেই ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় জাতীয় অধ্যাপকের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতে জানা গেছে তাঁর করোনা পজেটিভ। 

এর আগে বিকেলে অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান। বিকেলে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি জামান লেখেন, ' সকাল থেকেই জ্বর বুকে ব্যাথা থাকায় চিকিৎসকরা তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টারে (সিসিসি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'

গত ২৭ এপ্রিল হৃদরোগ সমস্যার পাশাপাশি কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স, প্রোস্টেটের সমস্যা ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক খন্দকার কামরুল ইসলামের অধীনে করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এরপর গত শনিবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানেই সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এর আগে ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তারও আগে দেশের বাইরে গিয়ে কয়েকবার চিকিৎসা নেন তিনি।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ভাগের পর তার পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোত জড়িত ছিলেন। এছাড়া ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আনিসুজ্জামানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

তাঁর গবেষণাগ্রন্থ : মুসলিমমানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), মুনির চৌধুরী (১৯৭৫), Social Aspect of Endogenous Creativity (1979), Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Official Library and Records (1981), আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩), পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮), Creativity, Identity and Reality (1993), Identity, Religion and Recent History (1995), Cultural Pluralism (1993) আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮), আমার চোখে (১৯৯৯), বাঙালি নারী : সাহিত্যে ও সমাজে (২০০০), পূর্বগামী (২০০১), কাল নিরবধি (২০০৩)ইত্যাদি।
বেশ কিছু বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ করেছেন তিনি। যেমন অস্কার ওয়াইল্ডের An Ideal Husband এর বাংলা নাট্যরূপ দিয়েছেন আদর্শ স্বামী (১৯৮২), আলেক্সেই আরবুঝুবের An Old World Comedy বাংলা নাট্যরূপ দিয়েছেন পুরনো পালা (১৯৮৮)।
একক ও যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। যেমন রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮), বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ (১৯৬৮), Culture and Thought (যৌথ, ১৯৮৩) মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১ম-৪র্থ খণ্ড (১৯৮২-১৯৮৬), বাংলা সাহেিত্যর ইতিহাস, প্রথম খণ্ড (যৌথ, ১৯৮৭), অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ (১৯৯০) স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন (১৯৯২), শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৩), নজরুল রচনাবলী ১ - ৪ খণ্ড (যৌথ ১৯৯৩), SAARC: A People’s Perspective (১৯৯৩), শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা (১৯৯৫), মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলী (১৯৯৫), নারীর কথা ( যৌথ ১৯৯৪), ফতোয়া ( যৌথ ১৯৯৭), মধুদা (যৌথ ১৯৯৭) ইত্যাদি।

এই বিপুল কর্মযজ্ঞের ভিতর দিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিচয় ও তাৎপর্য তুলে ধরেছেন; বুদ্ধিবৃত্তির ইতিহাস ও বাঙালি জীবনের আদর্শ ও মূল্যবোধ গঠনে তাঁর ভূমিকা নির্ধারণ করেছেন; বহুত্ববাদী জীবনবোধ ও গণতান্ত্রিক আদর্শ বিনির্মাণে বিচিত্র জ্ঞানকাণ্ড কীভাবে ভূমিকা রেখেছে তার স্বরূপ তুলে ধরেছেন; বাংলা গদ্য ও গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করে তিনি বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির পটভূমি তুলে ধরেছেন; আমাদের জাতিসত্ত্বার ইতিহাসে যেসব গুণিজন অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁদের কর্ম ও সৃষ্টির জগৎ উন্মোচন করে আমাদের গর্বিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003727912902832