শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা সদৃশ কেক!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আমি কি জাতীয় পতাকা কাটতে পারি? কেকে কেন জাতীয় পতাকা? কে বানিয়েছে এই কেক? কার আইডিয়া? কে অর্ডার দিয়েছে? আমি এ কেক কাটবো না। এই কেক সরান আমার সামনে থেকে।— এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কেকটি না কেটে। কিছু না খেয়ে। অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন মন্ত্রী। যাওয়ার সময় মন্ত্রী  অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন হায়দারকে শাসিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘কঠোর শাস্তি পেতে হবে কেক বানানোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে  জাতীয় পতাকা সদৃশ এই কেক দেখে মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। বিকেলে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে নাশতার সময়ে কেকটি দেখানো হয় মন্ত্রীকে। আর এতে ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী। তখন সন্ধ্যা নেমেছে।

ক্ষুব্ধ মন্ত্রী আরো বলেন, তিন বছর আগে ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানে ছেড়া-কাটা জাতীয় পতাকা নিয়ে সমালোচনা হয়। আজ আবার আমার সামনে জাতীয় পতাকার কেক!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক বলেন, মন্ত্রীকে কেক কাটার স্থলে নিয়ো যাওয়ার আগে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান কেক, ৪৬ টি মোমবাতি ও চাকু ইত্যাদি জোগাড় রয়েছে কিনা তা দেখে রেকি করে যান।  জানা যায়, বত্রিশ হাজার টাকায় ৪৬ কেজি ওজনের কেকটি বানানো হয় কামাল উদ্দিন হায়দার ও খোরশেদ আলম নামের দুইজন উপ-পরিচালকের আইডিয়া ও তত্ত্বাবধানে। বরাবরের মতোই এসব আদিখ্যেতা ও বালখিল্য কাজে অধিদপ্তরের উর্ধতনদের অন্ধকারে রেখেছেন কামাল গংরা। মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হওয়ায় কামালরা অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন। অধিদপ্তরের যেকোনো খাদ্য ও কেনাকাটার কমিটিতে যারাই থাকুক না কেন এসব কাজ গত প্রায় চার বছর যাবত করে আসছেন কামাল হায়দার ও খোরশেদ আলমরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাধীনতার ৪৬ বছরে ৪৬ কেজি ওজনের কেক বানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত উপ-পরিচালক কামাল হায়দার গংরা। ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের স্লোগান দিতেন তিনি। চাকরি জীবনের শুরুতেই বিএনপির সাংসদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পিএস ছিলেন।  আবার ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড  ও শিক্ষা অধিদপ্তরেই রয়েছেন।

গত ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার  সমিতির সমাবেশে জুতা পায়ে শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে সমালোচনার মুখে পড়েন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন।

জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি কেক কান্ডের অপর হোতা শিক্ষা অধিদপ্তরেরই উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম। ছাত্রজীবনে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। ক্যামব্রিয়ান থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হবে। একটি তদন্ত কমিটিও হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে গঠিত মূল কমিটির উপদেষ্টা মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর হোসেন বিশেষ অতিথি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ মূখ্য আলোচক ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীনতা কি করে আমাদর হলো’ শিরোনামে প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন হয়। ঢাকা শহরের সব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষরাও উপস্থিত ছিলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023131370544434