জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অবৈধ অনার্স কোর্স বন্ধের নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

মুরাদ মজুমদার, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

বিদ্যমান বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে চালু করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক (সম্মান) বিষয়ের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে কোর্স বন্ধ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের করা অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের একটি হলো অন-ক্যাম্পাস অনার্স কোর্স চালু করা। 

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনার চিঠিটি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রাম চালু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

এর আগে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে চারটি বিষয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয় গত বছরের জুলাইয়ে। এগুলো হলো-এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স। 

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এই ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছিলো। তবে ‘আইন মেনেই ভর্তি কার্যক্রম করা হচ্ছে’ জবাব দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো। 

সে সময় এসব প্রোগ্রামের ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে ইউজিসি চিঠি পাঠিয়েছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি বরাবর। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা আসার ওপর এখন নির্ভর করছে এই চার প্রোগ্রাম চলবে কি না। আর ইউজিসি চেয়ারম্যান বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে চলা এই প্রোগ্রামগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে এবার রাষ্ট্রপতির সেই নির্দেশনা এসেছে।

তথ্যমতে, এই চার প্রোগ্রামে গত বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। সেটিকে ‘ভর্তি আইনের লঙ্ঘন’উল্লেখ করে গত সেপ্টেম্বরে গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে কেনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা চায় ইউজিসি। তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

একইসঙ্গে এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করতেও নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। তবে ইউজিসিকে দেয়া ব্যাখ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো ‘গাজীপুরের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির গৃহীত সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ’।

গত বছর প্রথমবারের মতো চারটি বিষয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফের ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ফের সব ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।  

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চালু করা এই চার প্রোগ্রাম নিয়ে নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠায় ইউজিসি। 

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা জানানো হয় রেজিস্ট্রারকে। 

সে সময় আরো জানা যায়, এ সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতির কোনো নির্দেশনা পায়নি ইউজিসি। তবে এবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বন্ধের এ নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউজিসি সূত্র বলছে, কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও সংবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা আইনি জটিলতার শিকার হবেন। এটি হবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্টের কারণ। 

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এসব কোর্স বন্ধ করতে ইউজিসি যেসব বিধি-বিধান তুলে ধরেছে, সেক্ষেত্রে তারা কিছু খতিয়ে দেখেছে বলে মনে হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সেটি কাক্ষিত নয়। শিক্ষার অভিভাবক হিসেবে তাদের উচিত শিক্ষার বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখা। আমরা যা করেছি শিক্ষার বিস্তারের জন্যই করেছি।

উপাচার্য আরো বলেন, রাষ্ট্রপতি এসব প্রোগ্রাম বন্ধ করতে বললে অবশ্যই আমরা বন্ধ রাখবো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিন্ন ভর্তি চালু ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের জন্য তো রাষ্ট্রপতি আদেশ দিয়েছেন। সেগুলো তো তারা নিশ্চিত করতে পারেননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব কোর্স বন্ধের জন্য ইউজিসির বক্তব্য শিক্ষার সম্প্রসারণ নীতির বিরোধী। এমনটি প্রত্যাশিত না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক কোর্স চলছে আইন লঙ্ঘন করে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো - dainik shiksha অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ - dainik shiksha সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের - dainik shiksha সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029418468475342