জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : সেশনজটে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সেশনজট সমস্যা সমাধান চাই, এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে না। কোভিড-১৯-এর সময় সেশনজট সমস্যা সমাধানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু এবং এইচএসসি পর্যন্ত অটো পাস দেয়া হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শিক্ষার্থীদের এই সময়টা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, অনীহা, হতাশার দ্বারপ্রান্তে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধনে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরো বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ২ হাজার ২৫০টি। যার মধ্যে ৮৫৭টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়, যার মোট আসন সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজারের অধিক। স্নাতকোত্তর পড়ানো হয় ১৪৫টি কলেজে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২ হাজার ২৮৩টি অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়ন করে ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সেশনজট। ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে ৫-৬ এমনকি ৭ বছরও লেগে যায়। সেশনজট জটিলতায় ডিগ্রি থেকে মাস্টার্স কারোর কোনো নিস্তার নেই। কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক জটিলতা আরো বহু সমস্যায় ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কখন পরীক্ষার তারিখ ও ফলাফল দেবে তারও কোনো ঠিক নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের হতাশার কোনো সীমা নেই, না পাচ্ছে চাকরি না সম্পন্ন করতে পারছে পড়াশোনা। সেশনজটের যেন কোনো সমাধান নেই। আরো খারাপ লাগে একই সঙ্গে যাদের সঙ্গে স্কুল-কলেজ পাস করে তারা বিবিএ, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিএসসি শেষ করে চাকরি করে কেউ কেউ এমবিএ, এমএসসিও শেষ করার প্রস্তুতিতে লেগে যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসে থাকে অসহায়ের মতো।

এখন প্রশ্ন হলো আমাদের বাবার টাকা নেই যে এত খরচ করে কোনো প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ায়, তাই কম খরচে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছি। তাই বলে কি আমাদের এভাবে হতাশার মধ্যে দিন কাটাতে হবে? এই সেশনজটের ইতিহাস বহু পুরনো কিন্তু এটা কি পরিবর্তন হতে পারে না?

কী করব, কীভাবে করব? পড়াশোনাও শেষ হচ্ছে না চাকরিও হচ্ছে না অথচ পরিবারে একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। চাকরির বাজারে আনার্স, মাস্টার্স শেষ করেও কম্পিটিশনের অন্তঃ নেই এখন কী হবে? এভাবে বসে থাকলে কি কিছু হবে? এ কথাগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীর কথা, যা আরো তীব্রভাবে প্রযোজ্য এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত বেকারত্ব সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, মাদকাসক্তি, মানসিক ও পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক অবক্ষয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সেশনজট, লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভাঙতেও বেশ সক্ষম। কাগজে অনার্স ৪ বছর মেয়াদি লেখা থাকলেও তা শেষ করতে সময় নেয় এর দ্বিগুণ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার অধীনে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশ স্নেহও করে বটে, যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স শেষ করে এক্সাম নিতে মরিয়া হয়, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক্সাম না নিয়ে তার শিক্ষার্থীদের কাছে রাখতে চায় আর বলে, ‘আর ক টা দিন থেকে যা না, বাপু! তোদের মায়াতে জড়িয়ে গেছি যে!’ অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে খুব একটা বেগ পেতে হয় না, ১ বছর শেষের দিকেই পরীক্ষা নিয়ে নেয়া হয়। দুর্ভোগ পোহানো শুরু হয় ২য় বর্ষ থেকে। পরীক্ষা কখন হয় বা হবে তা অনিশ্চিত। ইচ্ছে হলেই পরীক্ষা হয়ে যায় স্থগিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা হচ্ছে দেশের আসল নাগরিক। কারণ তারাই দেশের যে কোনো সমস্যাতে পরীক্ষা না দিয়ে তীব্র আন্দোলন করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। তাদের দায়িত্ব হলো পড়া শেষে চাকরি পেয়ে পরিবারের দায়িত্ব বহন করা। সেশনজটের কারণে ৪ বছর ৭ বছর হয় তখন এসব শিক্ষার্থীর হতাশা আর বয়সটাও কিন্তু বাড়ে! যেখানে ২৩ বছর বয়সে অনার্স শেষ হওয়ার কথা সেখানে হয় ২৭ বছরে। তারপর মাস্টার্স, বয়স তখন অনেকের ৩০ ছুঁই ছুঁই। তারপর চাকরির প্রস্তুতি নিতে হয়। আর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর। হতাশা, দুশ্চিন্তা, অর্থকষ্ট সবকিছুর স্টিমরোলার চলে শিক্ষার্থীদের ওপর।

একপক্ষীয় দোষ দেবো না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করি। আপনারা সেশনজট ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনবেন। অনুরোধ থাকবে যে, নামে যেমন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কাজ এবং শিক্ষার মানও যেন জাতীয় পর্যায়ের করা যায়, সেসব দিক উন্নয়নে আপনারা কাজ করবেন। শিক্ষা হোক আনন্দদায়ক। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট দূর হোক। সেশনজট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।

লেখক : তৌফিক সুলতান, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha ৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড - dainik shiksha অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন - dainik shiksha ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ - dainik shiksha বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023398399353027