জাপানি মায়ের জিম্মায় থাকবে ২ শিশু

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জাপানি মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। রোববার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভুইয়া দুই শিশুর বাবার করা আপিল খারিজ করে এ আদেশ দেন।

জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফের আপিল খারিজ করে মায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত। 

গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো। এছাড়া দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন, তা খারিজ করে দেন আদালত। নাবালিকা দুই শিশু কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেয়া হয়।

আদালতের পর্যবেক্ষণ: রায়ে আদালত বলেছেন, মামলা করার কারণ আদালতের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি বাদীপক্ষ। বরং আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, জাপান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা দুই শিশুর বেড়ে ওঠা জাপানে। সেখানে তারা লেখাপড়া করেছে। তাদের মা নাকানো এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনটি সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সন্তানদের পাশে ছিলেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জাপানে বেড়ে ওঠা দুই শিশুর প্রাথমিক শুশ্রষাকারী তাদের মা নাকানো এরিকো। অথচ তাকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ অন্য একটি দেশে নিয়ে আসাটা মাতৃত্বের বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রূপটিকে অসম্মান করার নামান্তর।

রায়ে আদালত আরো বলেছেন, বাবা হিসেবে ইমরান শরীফ নাবালিকা দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার পূর্ণ হকদার। তবে জাপানি মায়ের কাছে দুই নাবালিকার হেফাজত তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শিক, তথা সার্বিক মঙ্গলজনক বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুলাই জাপানের নাগরিক এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের  বিয়ে হয়। তাদের তিনটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজো) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে আছে। এরপর মেয়েদের ফিরে পেতে একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন মা এরিকো। তাদের ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান।

পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে একই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো; যা চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটি (২০২১ খ্রিষ্টাব্দে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে শিশুদের বাবা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে আদেশে বলা হয়। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

আদেশে আরো বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেয়া যাবে না। তবে দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে রাজাধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028791427612305