জাবিতে তিন হলের সিডিউলেই গায়েব সাড়ে ১৪ কোটি টাকা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন তিনটি হলের কাজের সিডিউলের সঙ্গে মহাপরিকল্পনার ব্যাপক গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়েদের জন্য নির্মাণাধীন তিনটি আবাসিক হলের যে সিডিউল, তাতে গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। রোববার (৯ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাহুল এম ইউসুফ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ফলে মহাপরিল্পনার সিডিউলের সঙ্গে তিন জায়গায় অসঙ্গতি থাকায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। ফাউন্ডেশনে পাইলিংয়ের পরিবর্তে কম মূল্যের ম্যাট পদ্ধতি ব্যবহার, সীমানা প্রাচীর ও গ্যাস সংযোগ না দিয়েও এ কাজের সমমূল্যের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফিকির আঁটা হয়েছে সিডিউলে।

তবে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, মহাপরিকল্পনা মেনেই কাজ হচ্ছে। তবে এখানে ভুল থাকতে পারে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, আমাদের যা করতে বলা হয়েছে তাই করছি।

অপরদিকে প্রকল্পের শুরুতেই এমন নয়-ছয় দেখে সুষ্ঠুভাবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গত বছর ২৩ অক্টোবর ১৪শ’ ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। প্রকল্পের অধীনে এক হাজার আসন বিশিষ্ট ছেলেদের ৩টি ও মেয়েদের ৩টি হলের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েদের ৩টি হলের (১৭, ১৮ এবং ১৯নং হল) কাজ শুরু হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ডিটেইলস প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) ঘেঁটে দেখা যায়, ছেলে ও মেয়েদের জন্য ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ফাউন্ডেশন হবে পাইল ফাউন্ডেশন পদ্ধতিতে, প্রতিটি হলের নিচ তলাসহ অন্যান্য সব তলায় থাকবে গ্যাস সংযোগ এবং প্রতিটি হলেই থাকবে আলাদা সীমানা প্রাচীর।

তবে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নির্মাণাধীন তিনটি হলের কাজের সিডিউলে। সরেজমিন নির্মাণাধীন এলাকা ঘুরে ডিপিপির সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া যায়নি। পাইল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ম্যাট ফাউন্ডেশনে নির্মাণ হচ্ছে হল তিনটি।

ডিপিপি অনুযায়ী কাজের এমন অসঙ্গতি ও ঘাটতি থাকলেও শিডিউলে আটঘাট বাঁধা হয়েছে নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত সব টাকা উত্তোলনের।

ডিপিপি বলছে, মেয়েদের তিনটি আবাসিক হল প্রতিটি দুই হাজার ২২৫ বর্গমিটার ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মাণ করা হবে। গণপূর্ত অধিদফতরের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী, পাইল ফাউন্ডেশনে প্রতি বর্গ মিটারের খরচ ধরা হয় ৪০ হাজার ৫৩৩ টাকা আর ম্যাট ফাউন্ডেশনে ২৮ হাজার ৭৫২ টাকা।

পাইল ফাউন্ডেশন অনুযায়ী প্রতিটি হলের জন্য এতে মোট খরচ হওয়ার কথা ৯ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে ম্যাট ফাউন্ডেশন অনুযায়ী কাজ করলে খরচ হবে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

এর ফলে প্রতিটি হলের ফাউন্ডেশনেই ২ কোটি ৬২ লাখ ১৩ হাজার করে ৩টি হলে মোট ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৫ টাকা কম খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু এ টাকার কোনো হদিস মেলেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের সিডিউলে।

ডিপিপি অনুযায়ী প্রতিটি হলের নিচ তলার গ্যাস সংযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং অন্যান্য তলার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার। কিন্তু নির্মাণাধীন তিনটি হলের সিডিউলে গ্যাস সংযোগের কথা উল্লেখই নেই।

এছাড়া প্রতিটি আবাসিক হলের সীমানা প্রাচীরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। নির্মাণাধীন তিনটি হলের কোনো সিডিউলেই এ সীমানা প্রাচীর তৈরির কথা বলা হয়নি।

ডিটেইলস প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) অনুযায়ী মেয়েদের প্রতিটি হলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

তবে এ হলের কাজের সিডিউলে অসঙ্গতি ও কাজের ঘাটতি দেখানোর পরেও সিডিউলে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

প্রকল্পের কাজের সংশ্লিষ্ট এক ইঞ্জিনিয়ার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি হলের সিডিউলে নয়-ছয় এবং গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে এটা সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা দেখেও কেন এ সিডিউলে কাজ হচ্ছে?

গ্যাস ও সীমানা প্রাচীরের কাজ বাকি রেখেই বরাদ্দের সমপরিমাণ টাকা আনুমানিক খরচ দেখানো হয়েছে। তাহলে বাকি কাজ কে করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার আরও বলেন, গ্যাসের জন্য আলাদা একটা বরাদ্দ আছে সেখান থেকে টাকা নেয়ার জন্যই সিডিউলে এর দাম ধরা হয়নি। এটা মহা জোচ্চুরি।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা ও ডিপিপির নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে। গ্যাস সংযোগ তো থাকতেই হবে। পাশাপাশি অবস্থিত প্রতিটি হলে সীমানা প্রাচীর দিলে ঘিঞ্জি দেখা যেতে পারে। কোনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ না করে টাকা নিতে পারবে না। ফাউন্ডেশনের কাজ পাইল না ম্যাট পদ্ধতিতে হবে সেটা নির্ভর করবে মাটি পরীক্ষার পর। যেহেতু আমাদের মাটি ভালো তাই পাইল করার প্রয়োজন নেই।’

ডিপিপি অনুযায়ী পাইল, প্রাচীর ও গ্যাস সংযোগের কাজ না দেখিয়েও বরাদ্দের সব টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সিডিউলে এ কাজগুলো দেখানো উচিত ছিল। হয়তো আমাদের একটু ভুল হয়েছে। তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।’

প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত কনসালটেটিভ ফার্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু মাটি পরীক্ষার পর পাইলের প্রয়োজন হচ্ছে না তাই আমরা ম্যাট ফাউন্ডেশনেই কাজ শুরু করেছি। তবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যে পদ্ধতিতে কাজ করবে সে পদ্ধতির ব্যয়ের টাকাই দেয়া হবে।’

আর্থিক অনিয়মের আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যদি টাকা বেঁচে থাকে তাহলে সে টাকা সরকার পাবে।’

পাইলের পরিবর্তে ম্যাট ফাউন্ডেশনে কেন কাজ হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমাদের যেমনটা করতে বলা হয়েছে আমরা তেমনটিই করছি। এর বেশি কিছু আমরা বলতে পারব না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087552070617676