জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করা হয়। তাতে অভিযোগের সত্যতাও মেলে। গবেষণা কেন্দ্রের তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে (পিডি) অভিযুক্ত করে কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত প্রাথমিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের একটি কপি হাতে এসেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকিউরিং এন্টিটি (সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ) হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, পূর্ণাঙ্গ স্থাপন সনদ না থাকা সত্ত্বেও অর্থছাড়ের সুপারিশ ও কার্যসম্পাদন জামানত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ না করার বিষয় উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অসম্পূর্ণ স্থাপন সনদকে ‘স্থাপন ও সমাপনী সনদ’ বিবেচনা করে প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইরামেকোর অনুকূলে বাকি ১০ শতাংশ এলসি পেমেন্ট ছাড় করতে অগ্রণী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে অনুরোধ জানান। এমনকি তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন যন্ত্রটি সফলভাবে স্থাপন হয়েছে।
প্রতিবেদনের সপ্তম পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ইরামেকোর লোকাল এজেন্ট মেসার্স সাহাব উদ্দিন আহমেদ অ্যান্ড কোং জাবি উপাচার্যের অনুকূলে ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল কার্যসম্পাদন জামানত বাবদ সাড়ে ১৫ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা দরপত্রের শর্তানুযায়ী, যন্ত্রটি সরবরাহের পর ২৪ মাস ওয়ারেন্টি পিরিয়ড এবং পরবর্তী আরো ১২ মাস বিনামূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়ার শর্ত থাকার কথা। কিন্তু প্রকিউরিং এন্টিটি হিসেবে প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তিপত্র ও কার্যাদেশপত্রের কোথাও শর্ত দুটি উল্লেখ করেননি। কার্যসম্পাদন জামানত বাবদ ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি নাসির উদ্দিনের কাছে ছিল। কার্যাদেশপত্রের শিরোনামে সরবরাহ, স্থাপন, পরীক্ষা ও সম্পাদনের কথা থাকলেও পরিশোধের শর্তে শুধু স্থাপন সনদের কথা উল্লেখ করেন। মানা হয়নি আরো বেশকিছু নিয়ম।
এ ব্যাপারে প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দায়িত্বপালনকালে আমি সব নিয়মই পরিপালন করেছি। আর ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের সুপারিশের প্রেক্ষিতেই অর্থছাড়ের সুপারিশ করেছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের আমলে আমাদের একজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে ভারপ্রাপ্ত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন থাকায় এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ এ বিষয়ে জানতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।