জাবিতে হল নির্মাণে কাটা পড়বে ১১৩২টি গাছ!

জাবি প্রতিনিধি |

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে পাঁচটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জায়গা মিলিয়ে মোট এক হাজার ১৩২টি গাছ কাটা পড়বে।

এসব গাছের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছও রয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলগুলো নির্মাণ করার জন্য বিকল্প জায়গা থাকলেও প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে এ জায়গাগুলোই বেছে নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছে অনেক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য গত বছরের অক্টোবরে একনেক থেকে এক হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত এই অর্থ দিয়ে যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি হল নির্মাণ করছে।

এর মধ্যে ছেলেদের তিনটি হল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলসংলগ্ন এলাকায় এবং মেয়েদের দুটি হল বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ দিকে টারজান পয়েন্টে নির্মাণ করা হবে। গত ৩০ জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম নতুন এ পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। 

উদ্বোধনের পর থেকেই হল নির্মাণের স্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। বিপুল পরিমাণ গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে শিক্ষার্থীরা। তবে এসব সমালোচনার মধ্যেই হল নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও ভূমিরূপ ঠিক রেখেই এসব নির্মাণকাজ চলছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেসব জায়গায় হল নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির গাছসহ নানা ধরনের ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তরে হল নির্মাণে ৬৩টি বিলুপ্তপ্রায় গোলাপজাম গাছ, ১৭টি আমলকীগাছ, ২৩টি কামরাঙা গাছ, ১২টি চালতা গাছসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫৩৯টি গাছ কাটা পড়বে। এ ছাড়া হলের পূর্ব পাশে কাটা পড়বে কাঁঠাল, মেহগনিসহ নানা প্রজাতির ৩৫৮টি গাছ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত খেলার মাঠটিতেও নির্মাণ করা হচ্ছে আরেকটি হল। ফলে মাঠের পাশে থাকা ২৮টি গাছ কাটা পড়বে। হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠও আর থাকবে না। এ ছাড়া ছেলেদের তিনটি হল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তিন দিকে হওয়ায় হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করছে তারা। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব ছাড়াও পাশাপাশি চারটি ছেলেদের হল থাকলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটারও আশঙ্কাও রয়েছে।

মেয়েদের ১০ তলাবিশিষ্ট হল দুটি নির্মিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্টে। সেখানে একটি পুরনো বটগাছ ও ১৭৮টি কাঁঠালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭টি গাছ কাটা হবে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

এদিকে নানাভাবে গাছ কাটার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘আমরা চাই, আবাসন সংকট নিরসনে হল নির্মাণ হোক। কিন্তু প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের পরামর্শ নিয়ে হল নির্মাণ করলে হয়তো গাছ কেটে স্থাপনা করা লাগত না।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘বিল্ডিং করার জন্য কিছু গাছ কাটা লাগতেই পারে, কিন্তু সেটা হতে হবে পরিকল্পিত। কোনো প্রকার পরিকল্পনা ছাড়া উন্নয়ন একদিন আমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ’

এসব গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ। এ ছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে। উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছে তারা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করছে, নিয়ম মেনেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে হলগুলো কোথায় হবে, সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন যদি করতে চাই, তাহলে তো কিছু গাছপালা কাটা যাবেই।’

এদিকে এই বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যেই আগামী ১৭ জুলাই ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০১৯’ পালন করতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজসংলগ্ন পুকুরপারে ৫০০ গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002694845199585