জাবির বাজেটে পাঁচ বছরে শতকোটি টাকার হিসাব নেই

জাবি প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল অননুমোদিত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে উইকেন্ড কোর্স। উইকেন্ড কোর্স নিয়ে নানামুখী বিতর্ক রয়েছে। এ খাত থেকে গত ৫ অর্থ বছরে প্রায় শত কোটি টাকা আয় ও ব্যয়ের হিসাব বাজেটে দেখানো হয় নি। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেলেও সন্তোষজনক কোন ব্যখ্যা কারো কাছ থেকে পাওয়া যায় নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্মারক নং- বিমক/বাজেট ৪/২০১৭-৩৯৭১ তারিখ ১৫/৫/২০১৮ খ্রিঃ এর শর্ত ১১ মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আয় বার্ষিক বাজেটে প্রদর্শন করতে হয়। তবে ২০১৭-২০১৮ হতে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জাবির সান্ধ্যকালীন (পরবর্তীতে উইকেন্ড) কোর্সসমূহের আয় ব্যয় বার্ষিক বাজেটে প্রদর্শন করা হয়নি। এমনকি শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের আপত্তি সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের মূল বাজেটেও প্রদর্শন হয় নি উইকেন্ড কোর্সের আয় ব্যয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নির্ভরযোগ্য সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে ১৩টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে উইকেন্ড কোর্স চালু আছে। এক অর্থ বছরে এখান থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় হয়, যার ৫০ ভাগ বিভাগ গুলোকে দিতে হয়। এই আয় থেকে উপাচার্য,  উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার সহ এর সাথে জড়িত অফিস এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পান।

এ নিয়ে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরেরও আপত্তি রয়েছে। এমনকি অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত অডিটের জন্য আগত অডিট টিমকে তথ্য না দেবারও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অডিট টিমের দুই পৃষ্ঠার একটি গোপনীয় প্রতিবেদন হাতে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘জাবির সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহ যেমন- EMBA, MAPW, MGDS, WMBA, WMHRDIR X MSSDS ইত্যাদির দায় যথাক্রমে ৭৫.০০ লক্ষ, ৯৬.০০ লক্ষ, ৩৪.০০ লক্ষ, ৮৬.০০ লক্ষ, ৪৯.০০ লক্ষ ও ৩০.০০ লক্ষ টাকা জুন ২০২০ মাসের বার্ষিক হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু উহার আয় ব্যয় বার্ষিক বাজেটে প্রদর্শন করা হয়নি।’’

আরো বলা হয়,  সিএজি এর এডিশনাল ফাংশনস অ্যাক্ট-১৯৭৪ এর ৫(১) মোতাবেক তিনি বা তার যে কোন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের যে কোন ব্যক্তি বা তার জিম্বায় থাকা যে কোন রেকর্ডপত্র, নগদ টাকা ইত্যাদি যাচাই করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অডিট টিম কর্তৃক এবছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া চাহিদাপত্র নং- (১) শিঅঅ/নিরীক্ষা (২য় পর্ব) / ২০২০-২১/দল-০৯/০১, ০৯/০৩ ও ০৯/০৪  মূলে এ সংক্রান্ত তথ্যসমূহ চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয় নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও সিনেটর অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সবার আগে স্বচ্ছতা আশা করি। সেখানে এরকম অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা কাম্য নয় যেখানে এত বড় একটা পরিমাণ অর্থের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব থাকবে না। এখানে কী এমন অপরিহার্য কারণ আছে তা কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট করা প্রয়োজন। 

সিনেটর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় যে ব্যখ্যা দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা বলে এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা অদৃষ্ট ও অস্পষ্ট। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ব্যবস্থা এরকম হতে পারে না।

আর্থিক ও বাজেট সংক্রান্ত বিষয় হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোষাধ্যক্ষ ও হিসাবাধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক  রাশেদা আখতার বলেন, যেহেতু বাজেট এখনো সিনেটে পাস হয় নি কাজেই আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবোনা।

ভারপ্রাপ্ত হিসাবাধ্যক্ষ মোসানুল কবিরও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান,  জাবি’র বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত ইভিনিং প্রোগ্রামের কোন আয় ব্যয় জাবির রাজস্ব বাজেটভুক্ত নয়। আর এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। 

আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ চালানো সহ বিভিন্ন অনুল্লেখযোগ্য খাতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এই অর্থ ব্যয় হয়। তাছাড়া রেকারিং বাজেটে এই অর্থ উল্লেখ করা হলে ইউজিসি থেকে অনুদান/ মঞ্জুরী কমে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এটা করা হয় না।

তবে এসব ব্যাখ্যাকে নাকচ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থ বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আবু তাহের মজুমদার বলেন, "স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদন আছে কি না?  আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরে স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদন না থাকার দায় কার সেটাও দেখতে হবে। অনুমোদন না থাকলে সরকার কেন অর্থ দেবে? মূল কথা হলো, আপনি এ টাকা খরচ করেন কিন্তু রেভিনিউতে দেখিয়ে খরচ করেন। 

ঘাটতি বাজেট নিয়ে তিনি বলেন,  যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাইভার ড্রাইভারের স্কেলে বেতন পান সেখানে জাহাঙ্গীরনগরে ড্রাইভারকে টেকনিক্যাল অফিসার বানিয়ে লেকচারারের সমান বেতন দিলে তো বাজেট ঘাটতি থাকবেই। ড্রাইভারের স্কেল তো সারাদেশে একই। আর নিয়মানুযায়ী  বাড়ি ভাড়া না নিয়ে বর্গফুটের হিসেবে নেয়া হয়। এসব হলে কি বাজেট ঘাটতি হবে না?


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033869743347168