সিনেটে আসন্ন শিক্ষক প্রতিনিধি নিবার্চনকে ঘিরে নয়া দল গঠন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও বিতর্কিত শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে দল গঠন করেছেন তারা। নতুন দলের ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক ড. মোতাহার হোসেনকে আহ্বায়ক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খো. লুৎফুল এলাহীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নয়া দল গঠনের ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়।
আহবায়ক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, আইবিএর অধ্যাপক ড. আইরিন আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মালিহা নার্গিস আহমেদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপাচার্যের দায়িত্ব নেয়ার পর কতিপয় সুবিধাবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আস্থায় না নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনটির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে তিনি নিজের ব্যক্তি ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে সংগঠনটিকে ব্যবহার করতে চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এতে প্রকৃত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা মর্মাহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, গত এক বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এমনকি, সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নির্বাচনী বোর্ডে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে পেশাদারত্বের অভাব দেখিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠে। এ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, উপাচার্য পদ ও সরকারের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক ও বিব্রতকর। আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা যে, এ অভিযোগ সত্য। তবে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তারা বলেন, যাদের কখনো জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশ নিতে দেখা যায়নি, তারাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য উপাচার্যকে ক্রীড়নকে পরিণত করেছেন। সর্বোপরি, বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও উপাচার্যের এসব বিতর্কিত কর্মকান্ড জাতীয় অঙ্গনে আওয়ামী লীগের ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে ও করছে। পরিবর্তনের আশায় আমরা এক বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সবার আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে।’ এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নবগঠিত সংগঠন অংশ নেবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। নবগঠিত সংগঠনের আহবায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকের কাছে নির্মোহভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এই নতুন সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আসন্ন সিনেট নির্বাচনে সবার সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ গঠন করা হয়েছিল। দীর্ঘ চার বছর পর গত বছরের ১১ অক্টোবর উপাচার্য তার আপন ছোট ভাই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এ মামুনকে আহ্বায়ক এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদকে সদস্য সচিব করে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এরপর চলতি বছরের ২৫ জুলাই ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট বর্ধিত কমিটি গঠন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অসন্তোষ আরো তীব্র হয়।