জাবি থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অতিথি পাখি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতি বছর শীতে অতিথি পাখিরা ঘুরতে আসে। পাখিদের কল-কাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। লাল শাপলার লেকগুলোয় দিনভর পাখিদের জলকেলি ও খুনসুটিতে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য প্রতি শীতেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আগের তুলনায় এবছর পাখির সংখ্যা প্রায় অর্ধেক বলে মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

পাখির অভয়ারণ্য বলা হয়ে থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে। সবুজ অরণ্য ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি শীতে দূর-দূরান্ত থেকে অতিথি পাখি আসে। মূলত সুদূর সাইবেরিয়া থেকেই অতিথি পাখি বেশি আসে। তাছাড়া বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকে পরিযায়ীদের আগমন ঘটে। প্রচণ্ড শীতে এসব দেশে দেখা দেয় খাদ্যের অভাব, শুভ্র তুষারে ছেয়ে যায় গাছপালা। উষ্ণতার খোঁজে অতিথি পাখিরা হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের অনেক এলাকাতেই আসে।

পরিযায়ী পাখি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সচরাচর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর যে পরিমাণ পাখি আসে এবার এর অর্ধেক এসেছে এবং পরে চলেও গেছে। প্রতি বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি পাখি আসতে শুরু করলেও এ বছর এর কিছু দিন এসেছে। এরপর পাখিদের আনাগোনাও অনেক কমে যায়। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরসংলগ্ন লেকে ৯৯০টি

পাতি সরালি, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের বাইরের লেকে ৩৫০টি শামুক খোল ও সেন্টারের ভেতরে লেকে ২ হাজার পাতি সরালি দেখা গেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় যা প্রায় অর্ধেক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে থেকে পাখি আসা শুরু করে। গাছপালায় ঘেরা এই নগরীর ৪টি লেকে পাখি বসে। পাখিদের আশ্রয়ের জন্য লেকগুলো প্রতি বছর পরিচর্যা করা হয়।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি-বিদেশি ১৯৫ প্রজাতির পাখি দেখা মিললেও বর্তমানে এই সংখ্যা অনেক কম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অতিথি পাখির মধ্যে বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জলময়ূর, ছোট সরালি, বড় সরালি, গার্গিনি, চিটা টুপি, বামুনিয়া, মুরহেন, খঞ্জনা, পিনটেইল, কোম্ব ডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জলপিপি, শামুকভাঙ্গা, মানিকজোড়, খোঁপাডুবুরি ছোট পানকৌড়ি প্রভৃতি। তবে এ বছর নকতা হাঁস (কোম্ব ডাক), ছোট সরালি ও বড় সরালি দেখা গেছে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, গত দুই বছরে পাখিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। লেকগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন না করা, পরিচর্যা না করা ও জনসচেতনতার অভাবে পাখিরা এলেও তারা চলে যাচ্ছে। পরিবহন চত্বরসংলগ্ন লেকে কাঁটাতারের বেড়া না দেয়া বা এখন যতটা আছে তার চেয়ে দীর্ঘ করলে দর্শনার্থীরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পাখিদের দেখতে পারত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি করতে পারছে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনসংলগ্ন জলাশয়ে দীর্ঘদিন যাবত পরিচর্যার অভাবে অসংখ্য কচুরিপানা জমেছে। এই জলাশয়ে এক বছর পরিচর্যা করতে পারলে পরবর্তী সময়ে পরিষ্কারের খরচও কমে যাবে, এতে অতিথি পাখি এই লেকে আসতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিতব্য ১০তলা বিশিষ্ট ৬টি বিল্ডিংসহ অপরিকল্পিত গাছ কাটা ও যত্রতত্র বিল্ডিং তৈরির জন্য পাখিদের ফ্লাইং জোন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না বলে মনে করেন অধ্যাপক কামরুল। তিনি বলেন, এটা অনেক ক্ষেত্রে বলা যায় না, পাখিরা সচরাচর এক লেক থেকে অন্য লেকে যাতায়াত করে। এক্ষেত্রে তাদের ফ্লাইং জোনের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। অতিরিক্ত যান চলাচল ও শব্দদূষণ পাখিদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই এদের অধিকাংশই চলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু গণমাধ্যমকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগরে অতিথি পাখি মূলত নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের জন্য আসে। পাখিরা কৃষি জমি থেকে যে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করত সেটাও এখন নেই। খাদ্যাভাব তাদের এখানে পরিযায়ী হতে নিরুৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, শব্দের স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সি হলো দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল। পাখিরা আরো ‘লো ফ্রিকোয়েন্সি’তে যোগাযোগ করে। তবে এ ক্যাম্পাসে এখন সবসময়ই ৬০ ডেসিবেল থাকে। ক্যাম্পাসের ভেতর অতিরিক্ত জনসমাগম, বিল্ডিং বা রাস্তার পাশের বড় বড় ফ্লাড লাইটের আলোকদূষণও একটি বড় কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পরিষ্কার করা, পারে বেড়া দেয়া বা মানুষকে সতর্ক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামান্য পরিমাণ বাজেট দেয়া হয়। আমাদের যে সচেতনতা তৈরি করার প্রয়োজন আমরা তা যথাযথই করেছি এবং বাকি কাজগুলো করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ প্রতিবছরের মতো এবারো পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামীকাল শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) ‘পাখি মেলা ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053541660308838