বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে পরীক্ষাও চলমান রাখার দাবি তুলেছেন তাঁরা। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জবরদস্তি বের করে দিয়ে হলগুলো সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৭ মে থেকে হলগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে মন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি হতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবারও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অব্যাহত ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালের দিকে যেকোনো মূল্যে হলে অবস্থান করার ঘোষণা দেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : আবাসিক হলেই অবস্থানের কথা জানিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সরকারের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের অনুরোধ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাতে সাড়া না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হলে হলে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে। পরে সেসব হল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকালের দিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে তাঁরা হলে অবস্থানের বিষয়ে অনড়। আশ্বাসের প্রতিফলন না দেখলে পরবর্তী সময়ে কঠোরভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে গতকাল বিকেলে প্রভোস্ট কমিটি বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অবশ্যই হল ছাড়তে হবে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন হলগুলো খালি করার উদ্যোগ নেয়। তারা হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এর আগে বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হল ছেড়ে দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব প্রাধ্যক্ষ হলে চলে গেছেন। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা হলে অবস্থান করবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের আটটি হলের সাতটি আগে থেকেই খালি ছিল। বাকি হলটিতে শুধু শিক্ষার্থীরা ছিলেন। তাঁদের বের করে দিয়ে সিলগালা করা হয়েছে। আর ছেলেদের আটটি হলের পাঁচটি রাত ১০টার মধ্যেই খালি করে সিলগালা করা হয়। বাকি তিনটি খালি করতে অভিযান চলছিল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের চলমান সব পরীক্ষা (সন্ধ্যাকালীনসহ) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে প্রশাসন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দিতে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। অন্যথায় যেকোনো মূল্যে হলে ওঠার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে ডায়না চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
হল খুলে দিতে এবং পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবিগুলো তুলে ধরে।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমি তোমাদের দাবির সঙ্গে একমত। তবে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারব না। আর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিলে আমিও পরীক্ষা চালু করব। এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে গত দুই দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে গতকাল ক্যাম্পাসে তেমন কিছু দেখা যায়নি। সরেজমিনে গিয়ে দুপুর ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টিএসসি ভবন, কলা ভবন, কার্জন হল, সমাজবিজ্ঞান ভবন ও মধুর ক্যান্টিনসহ আশপাশের কোথাও কোনো ধরনের জটলা দেখা যায়নি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সচিবালয় ঘেরাও : শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির সমাপ্তি শেষে এই আহ্বান জানানো হয়।
সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো শেষ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, সরকারি দলের প্রতিটি সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। সারা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে কি করোনা সংক্রমণের শঙ্কা নেই? দেশের সব কিছু যেখানে সচল রয়েছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ রয়েছে সেটি বোধগম্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে হবে।