জাবি শিক্ষার্থীরা ফিরতে চায় শ্রেণিকক্ষে, অনলাইনেই আগ্রহ শিক্ষকদের

জাবি প্রতিনিধি |

করোনা মহামারিতে সাত মাস ধরে বন্ধ দেশের সংস্কৃতি চর্চার রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজ নগরের বাসিন্দারা দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি। ফলে শ্রেণিকক্ষে ফেরার প্রতীক্ষায় শিক্ষার্থীরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে সেশনজটের মতো দুর্ভোগ। তার পরে আবার মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনা মহামারি। তাই সেশনজট নিরসনে ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনিশ্চয়তার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আটকে থাকা চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তবে বর্তমান সংকটে অনলাইনেই ক্লাস নেওয়াকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন শিক্ষকেরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে কারো চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান, কারও পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত আবার অনেকের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়েছে। এমনকি কিছু বিভাগের পরীক্ষা শেষ হলেও ‘মৌখিক ও ল্যাব পরীক্ষা’ রয়েছে বাকি।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হলেও সেসব শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিংবা অধিকাংশ পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাদের বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি। এছাড়া প্রযুক্তিগত অভাব, ডিজিটাল ডিভাইস জটিলতা, নেটওয়ার্ক স্বল্পতার কারনে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুব কম হাওয়ায় অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে আগে থেকেই সেশনজট আছে। আইন অনুষদে সেশনজট রয়েছে এক বছরের। কলা ও মানবিকী অনুষদের বাংলা বিভাগ ছাড়া বাকি আটটি বিভাগে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগেই ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে। গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে এবং পরিসংখ্যান বিভাগ ও গণিত বিভাগে ছয় মাস করে সেশনজট আছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে রয়েছে দেড় বছরের সেশনজট ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস জানায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, সরকার ও রাজনীতি, প্রত্নতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৩০টিরও বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচের চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ হাসান বলেন, মহামারির প্রকোপের কারণে অনির্দিষ্ট সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। অলরেডি হাজারো শিক্ষার্থী ভয়াবহ সেশনজটে পড়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রয়োজনে পরীক্ষামূলকভাবেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া যেতে পারে।

ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘করোনা পুরোপুরি নির্মুল না হলে আমরা কোনভাবেই ক্লাস নেয়ার পক্ষে না, তবে যেসকল শিক্ষার্থীর অনার্স এবং মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা আটকে আছে, প্রাথমিকভাবে ধাপে ধাপে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করতে দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারে প্রশাসন। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে সুষম খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিতে হবে হল প্রশাসনকে। আর অনলাইনে ক্লাসই যেখানে অনেক শিক্ষার্থী করতে পারছেন না, সেখানে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার পাঁয়তারা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে আরো বঞ্চিত করবে।

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন জলি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়াও প্রায় অসম্ভব এমনকি হলের গণরুম বাস্তবতাও ভুললে চলবে না। তবে আমরা অনলাইন ক্লাস এর সাথে সাথে পরীক্ষাগুলোও কিভাবে অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারি তা নিয়ে একটি উচ্চতর কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। অন্ততপক্ষে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নিতে পারার অনুমতি খুব দ্রতই দেয়া উচিত বলে মনে করি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অনেক বিভাগই ক্লাস শেষ করে শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য আটকে আছে। বিশেষ করে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। সনদের কারণে তারা উচ্চশিক্ষা ও বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে না। তাদের কথা চিন্তা করেই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির এক সভায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ প্রস্তাবটির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002932071685791