উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
রোববার (২৩ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আদালতে আশ্রাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
গত ২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে আটক করে আদালতের পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাতে আসামির বাড়ি থেকে আটকের পর শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিনের কপি দেখালে তা আমলে নেয়নি বলে দাবি আসামির পরিবারের। পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন পটুয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন। আশ্রাফুল হাওলাদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বাজারঘোনা গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদারে ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতি।
আশ্রাফুলের চাচা রাজা মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সদর থানা পুলিশের এএসআই মিজানুর রহমান আশ্রাফুলকে আটক করেন। আশ্রাফুলের পরিবার ওই রাতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার সই করা প্রত্যয়নপত্র ও জামিননামার অনলাইন কপি দেখায় পুলিশকে।
এ প্রসঙ্গে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান বলেন, আমি ওয়ারেন্ট অনুযায়ী আসামিকে গ্রেফতার করেছি। এরপর আশ্রাফুলের পরিবার ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন ও ওসি স্যার কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ওই প্রতিবেদন ২১ মে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা।
এরপর হাইকোর্ট পটুয়াখালী থানার ওসি মনিরুজ্জামান ওএএসআই মিজানুর রহমানকে তলব করেন।
সে অনুসারে ১৮ জুন তারা হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। আদালত ২৩ জুলাই ফের তাদের আসতে বলেন। আর আশ্রাফুল হাওলাদারের আইনজীবীকে বলেছিলেন বিটিআরসির কাছ থেকে ফোন কলের রেকর্ড নিয়ে আসতে।
সে ধারাবাহিকতায় রোববার (২৩ জুলাই) শুনানির শুরুতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান।
হাইকোর্ট থেকে আশ্রাফুলের জামিন পাওয়ার বিষয়টি তারা জানতেন না। আসামিরা জামিননামা দেখাননি, আইনজীবীর প্রত্যয়নও দেখানো হয়নি। এমনকি কোর্টে হাজির করার সময়ও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এ গ্রেফতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না। আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।
তখন ফোন কলের বিষয়ে জানতে চেয়ে আদালত বলেন, (গ্রেফতারের সময় পুলিশ সদস্যরা) টেলিফোনে কথা বলে নাই? আইনজীবী (আলী আহসান মোল্লা) তো বলেছিলেন তিনি ফোনে কথা বলেছেন।
তখন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, বিটিআরসির কাছে কল রেকর্ড চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তারা কোর্টের আদেশ ছাড়া দেবে না। বিটিআরসি বলেছে, কোর্টের আদেশ পেলে দেবে।
তখন আদালত বলেন, আগামীকাল ফোন কলের রেকর্ডের বিষয়ে হলফনামা (আবেদন) নিয়ে আসেন। আমরা রেকর্ড কল করবো।
এ সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চাইলে আদালত বলেন, আসতে হবে।