জামিন মেলেনি ১২ শিক্ষার্থীর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়া থেকে আটক ১১ শিক্ষার্থীর জামিন মেলেনি। রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত আট শিক্ষার্থীর জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্যদিকে ৩ শিক্ষার্থীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একজন অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, আদালতে আনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক দেখা গেছে। তারা শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিল।


সম্প্রতি গ্রেপ্তার ১২ শিক্ষার্থীর পরিবার রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী রায়হানুল আবেদিনের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন গাড়ি চালক। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। মা শাহানারা আক্তার গৃহিণী। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রায়হানুল তৃতীয়। কুমিল্লা থেকে এসএসসি পাস করে তেজগাঁও পলিটেকনিক কলেজের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রায়হানুল।

তার বাবা রফিকুল ইসলাম  বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় রায়হানুল গ্রামের বাড়িতে ছিল। সে কোনো প্রকার আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। ছেলেমেয়েকে আর্থিকভাবে খুব একটা স্বাধীনতা না দিতে পারলেও পড়ালেখার প্রতি অনেক বেশি জোর দিয়েছি। দিনরাত কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে যা কিছু উপার্জন করি সব ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করি। ছেলেকে উত্তরার ভাড়া বাসা থেকে আসা-যাওয়া করে ক্লাস করতে বলেছিলাম। যানজটের কারণে এবং কলেজের কাছাকাছি হওয়ায় মহাখালী একটি মেসে ভাড়া থাকতো। 

মো. মাহফুজের মামা সোহাইদুর রহমান বলেন, মাহফুজের গ্রামের বাড়ি কাপাশিয়ার শ্যামপুরে। বাবা মো. মজিবুর রহমান হাইস্কুলের শিক্ষক। মা ফায়জুন্নাহার শয্যাশায়ী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে পাস করার পর দেড় বছর আগে ঢাকা পলিটেকনিকে ভর্তি করেন তার মামা। মাহফুজ কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার মামা’ই গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সে গ্রামের বাড়ি থেকে একা ঢাকাতে আসতে পারে না এমনটাই জানান মামা সোহাইদুর। তিনি বলেন, পলিটেকনিকে ভর্তির আগে সে কখনো ঢাকা আসেনি। তার নামে সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় ১টি মামলা হয়েছে। ডিবি পুলিশ তুলে নেয়ার ২ থেকে ৩ দিন আগে সে গ্রাম থেকে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সে পরিবারের সঙ্গে গ্রামে ছিল।

মেহেদী হাসান রাজিবের বড় ভাই মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তার বাবা মো. হযরত আলী একজন ভ্যান চালক। বড় ভাই হুমায়ুন একটি মুদি দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাজীপুর থাকেন। মা খোদেজা বেগম অসুস্থ। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার আতিরা গ্রাম। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে মেহেদী সবার ছোট। 

মেহেদী ঢাকা পলিটেকনিকে তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারে পড়েন। বাবার ভ্যান চালানো টাকায় পড়ালেখা করে মেহেদী। তার নামে ১টি মামলা হয়েছে। পরিবারের দাবি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সে গাজীপুরে বাবা মায়ের সঙ্গে ছিল। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মা অসুস্থ থাকায় শনিবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার মায়ের কাছে চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। মেহেদীর বড় ভাই বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন কাজ না করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। ভাইকে কীভাবে জেল থেকে ছাড়াবো এটা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। 

মো. মোজাহিদুল ইসলামের বাবা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জ ঝিনাইদহ জেলায়। একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। মোজাহিদুলের মায়ের নাম শাহনাজ পারভীন। দুই ভাইবোনের মধ্যে মুজাহিদ বড়। সে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল এ দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়েন। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় তার নামে ১টি মামলা হয়েছে। কোনো ধরনের আন্দোলনে যোগ না দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অনেক আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। আন্দোলনের সময় সে বাড়িতে ছিল বলে তার অভিভাবকরা জানিয়েছেন। 

ইফতেখার আলমের বড় ভাই বলেন, বাবা মো. জয়নাল আবেদীন একটি মাদরাসা থেকে অবসরে গেছেন। মা জান্নাতুল ফেরদৌস গৃহিণী। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। ৬ ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। ইফতেখার ঢাকা পলিটেকনিকে কেমিক্যাল বিভাগে ৮ম সেমিস্টারের ছাত্র। সম্প্রতি সে একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসেছিল।

তাকে তেজকুনি পাড়ার একটি মেস থেকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি। তার নামে দুটি মামলা হয়েছে। পরিবারের দাবি সে কোনো আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিল না। জহিরুল ইসলামের বাবা মো. এনামুল হক বলেন, তিন ভাই বোনের মধ্যে জহিরুল সবার বড়। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর ভোরবাজার গ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেই সুবাদে তেজকুনিপাড়া একটি মেসে থাকতো। তার নামে ১টি মামলা হয়েছে। 

সাইফুল্লাহ বিন মানসুরের বাবা মানসুর রহমান বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরের চিংড়ি গ্রামে। তার বাবা বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের রাবার প্রজেক্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। করোটিয়া ছাতক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্স পরীক্ষা দিয়েছে সাইফুল্লাহ। ৬ ভাই বোনের মধ্যে সাইফুল্লাহ ৪র্থ। সম্প্রতি এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালে তার একটি চাকরি হয়েছে। তেজগাঁওয়ে ৪৫ দিন প্রশিক্ষণ নিতে এসে মেসে ওঠে সাইফুল্লাহ। মহাখালীর রসুলবাগের একটি মেস থেকে তাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ১টি মামলা হয়েছে। তার বাবা বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সে বাড়িতে ছিল। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.008375883102417