জালিয়াতি করে ৪০০ জনের চাকরি

নজরুল ইসলাম |

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি করে গত দুই বছরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৪০০ ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন। এই তথ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

নিয়োগ জালিয়াতিতে জড়িত বিভিন্ন চক্রের ১৮ সদস্যকে গত এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানতে পারেন ডিবির কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন নিয়োগ জালিয়াতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৮-১০ লাখ টাকা করে আদায় করেছে জালিয়াত চক্র। এখন পর্যন্ত পাঁচটি জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। একটি চক্রের সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রতিটি চক্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য থাকে। গত এক বছরে অন্তত ৪০টি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে অংশ নিয়েছে এসব চক্র।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আবু জাফর বেশ কিছুদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাঁকে দায়িত্ব থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান  বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি পাঠাবেন তাঁরা। নিয়োগ জালিয়াতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আবু জাফর ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের আরও কয়েকজন জড়িত। এ ছাড়া রাজধানীর পাঁচটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের বিষয়েও জালিয়াতিতে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সব কটি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিবি জানায়, বিভিন্ন চাকরির লিখিত পরীক্ষার আগে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা নানা মাধ্যমে নিয়োগপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সমঝোতা হলে ওই নিয়োগপ্রার্থীকে ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো দেখতে একধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস সরবরাহ করেন চক্রের সদস্যরা। এর ভেতরে মুঠোফোনের সিম থাকে। এ ছাড়া কানে লাগানোর জন্য বোতাম আকৃতির ইয়ারফোন থাকে। নিয়োগপ্রার্থী পরীক্ষার হলে এই ডিভাইস নিয়ে যান। প্রশ্ন পাওয়ার পর এর মাধ্যমে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে থাকা জালিয়াত চক্রের কোনো এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরীক্ষার হল থেকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন বলে দেন নিয়োগপ্রার্থী। ইয়ারফোনে উত্তর শোনানো হয় তাঁকে।

ডিবি সূত্র জানায়, নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল প্রথমে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন সোনালী ব্যাংকের পটুয়াখালীর একটি শাখার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা (আইটি) অসীম কুমার দাস, পূবালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখার শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম এবং কৃষি ব্যাংকের শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা মো. সোহেল আকন্দ। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু, তাঁর সহযোগী মনিরুল ইসলাম ও ফিরোজ আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা চলার সময় ইডেন মহিলা কলেজ, লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ পাঁচ চাকরিপ্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য সাতজনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলকেশ দাস উল্লেখ করেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে ২০১২ সালে পাস করেন তিনি। ২০১৫ সালের শেষ দিকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মোহাম্মদ কার্জন নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে। একপর্যায়ে তাঁরা দুজন মিলে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ফন্দি আঁটেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে কার্জনের কাছ থেকে ৫১ হাজার টাকায় তিনটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস (এটিএম কার্ডের মতো দেখতে) কেনেন তিনি। পরে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে চীন থেকেও একই ধরনের ডিভাইস আনান। এরপর জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া তাঁর এক বন্ধু ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান ওরফে শাহীনকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে লোকজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

সূত্র: প্রথম আলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080821514129639